কুবিতে দশমিক ভগ্নাংশে ইনকোর্স নম্বর, ক্ষোভ থেকে- অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম পরীক্ষায় দশমিক ভগ্নাংশে (একের চেয়ে কম) নম্বর দিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান। স্নাতক ৮ম সেমিস্টারের ইনকোর্সের অন্তভুর্ক্ত ১০ নম্বরের মিডটার্ম পরীক্ষায় ০.৩৩ ও ০.৬৭ পেয়েছেন দুই শিক্ষার্থী।
সেশনজট নিরসনের দাবিতে আন্দোলন, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করায় শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষোভ থেকে এমন অদ্ভুত নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৮ম সেমিস্টারের ট্যুরিজম অ্যান্ড হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ক্লাস নেন মুর্শেদ রায়হান। সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার দেড় মাসেও ইনকোর্সের রেজাল্ট দিতে পারেননি কোনও শিক্ষক।
এর মধ্যে ২৩ অক্টোবর ওই কোর্সের ইনকোর্স ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায় ১০ নম্বরের মিডটার্ম পরীক্ষায় ২ শিক্ষার্থী ০.৩৩ ও ০.৬৭ নম্বর পেয়েছেন। দুই নম্বরের নিচে ১৩ জন, ২১ জনকে তিন-চার নম্বরের নিচে দেওয়া হয়েছে।
নম্বরপত্রের এমন বৈষম্যমূলক নম্বর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাতে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিভাগের সেশনজট নিয়ে বারবার আন্দোলন করায় নম্বরপত্রে এমন বৈষম্য করেছেন শিক্ষক।
জানা যায়, বিভাগটিতে শুরু থেকে সেশনজট রয়েছে। এনিয়ে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুই দফা আন্দোলন করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সেশনজট দ্রুত নিরসনের আশ্বাস দেয় বিভাগটি।
২০২১ সালের ১৯ সেপ্টম্বর আন্দোলন করা ও ফেসবুকে লেখালেখি করায় ১১তম ব্যাচের ৪০ শিক্ষার্থীকে শোকজ করে বিভাগটি। এনিয়েও সেসময় প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা।
একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সেশনজট নিয়ে আন্দোলন, দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি, শিক্ষকদের সিন্ডিকেট রাজনীতির কারণে কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। পরিচিত একটি কোর্সের মিডে ০.৩৩, ০.৬৭ দেওয়া শিক্ষকের ব্যক্তিগত ক্ষোভ-আক্রোশ বলে মনে করছেন তারা।
শিক্ষক মুর্শেদ রায়হান বলেন, "এটা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিষয়, সাংবাদিকদের কাছে গেলো কেন? শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে সে অনুযায়ী নম্বর পেয়েছে। এবিষয়ে যদি তাদের কোনো অভিযোগ থেকেও থাকে তাহলে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান আছে এবং কোর্স টিচার আছে, অ্যাকাডেমিকভাবে সমাধান হতে পারতো।"
অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেমিস্টারটি জুলাই মাসে শেষ করতে হবে উল্লেখ থাকলেও বিভাগটিতে তা সেপ্টেম্বরে শেষ হয়।
এনিয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মাহামুদুল হাসান খান বলেন, এসময় দুটি বন্ধ থাকায় একমাস পেছাতে হয়। আমি সবোর্চ্চ চেষ্টা করেছি।
এদিকে সেমিস্টার ফাইনালের আগে ইনকোর্সের রেজাল্ট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানেননি কোনও কোর্স শিক্ষক। এনিয়ে ড. মাহামুদুল বলেন, ইনকোর্সের রেজাল্ট শিট দিয়েই ওই শিক্ষক সেমিস্টারের খাতা নিয়েছে। এখানে নিয়মের ব্যতয় ঘটেনি।
বিভাগটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, "শিক্ষকরা অভিভাবকের মতো। আমার মনে হয় না, কোন শিক্ষক ব্যক্তিগত ক্ষোভ শিক্ষার্থীর ওপর তুলবে। ওরা আমাদের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ছোট ভাই-বোনও। তবে কোর্স টিচারের এখতিয়ার আছে কেমন নম্বর দিবে। শিক্ষার্থীরা যেরকম লিখেছে হয়তো সেরকম নম্বর পেয়েছে। এব্যাপারে কোর্স টিচারই ভাল বলতে পারবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, "ইনকোর্সের পরীক্ষায় এমন রেজাল্ট তো অস্বাভাবিক। শিক্ষকের এমন আচরণ কাম্য নয়। আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও কোর্স টিচারের সাথে কথা বলে ব্যাপারটি জানার চেষ্টা করব এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব।"