বাসযোগ্য নগর গড়তে জাতীয় নগর নীতিমালার দ্রুত অনুমোদন জরুরি: বিশেষজ্ঞরা
ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে জাতীয় নগর নীতিমালার অনুমোদন দিয়ে, এর বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর আয়োজনে ঢাকা মহানগরীর বিদ্যমান সমস্যা এবং তা সমাধানে করণীয় নিয়ে 'জনঘনত্ব, বাসযোগ্যতা ও টেকসই উন্নয়ন' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, নিরাপদ ও সুষম নগর তৈরির জন্য জাতীয় নগর নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া প্রয়োজন। তারা দাবি করেন, ২০১৩ সালে খসড়া তৈরির পর প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হলেও নীতিমালাটি অনুমোদন পায়নি, যা এখনও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
আগামী ৮ নভেম্বর বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০২২ উদযাপনের অংশ হিসেবে বিআইপি কনফারেন্স হলে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নগর নীতিমালার কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয় এবং ২০১৩ সালে এসে খসড়া তৈরির পরেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এখন এটি পড়ে আছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "জাতীয় নগর নীতিমালা কোথায়? এটি অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নেন।"
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ঢাকাসহ অন্যান্য নগরগুলোকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ন্যাশনাল কমিটি গঠন করতে হবে। ন্যাশনাল ফিজিক্যাল প্ল্যান করা ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বিভাগ, জেলায় সব শ্রেণির ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন করে শহরের উন্নয়ন করতে হবে। ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোরও বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন ড. ইশরাত ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করার জন্য পার্ক বা উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন নামে-বেনামে জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
দেশে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, "ড্যাপের মূল পরিকল্পনা করা হয়েছে মানুষের চিন্তা করে। ড্যাপের আওতায় আমরা ঢাকাকে ৬ টি অঞ্চলে বিভক্ত করে সুষম উন্নয়ন করতে চাই। ৬ টি অঞ্চলে যদি ৬ টি রিজিওনাল পার্ক আমরা তৈরি করতে পারি, তবে ঢাকার বাসযোগ্যতা অনেকাংশেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব।"
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় রাস্তার পার্সেন্টেজ মাত্র ৬ শতাংশ, কিন্তু দরকার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এটিই ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, "ঢাকাকে টেকসই করতে হলে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দখলকৃত খালের সীমানা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সিএস দাগে খালের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। সিএস দাগ চিহ্নিত করে ঢাকার খালগুলোকে উদ্ধার করে বাঁচাতে যাবে।"
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, "বসবাসরত সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ঢাকাকে বাসযোগ্য ও টেকসই করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে রাজধানী দৃষ্টিনন্দন, নিরাপদ বাসযোগ্য ও টেকসই শহর হবে। গ্রামগুলোতে শহরের সুবিধা নিশ্চিত হলে শহরমুখী মানুষের চাপ কমবে।"
গোল টেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন এর সভাপতিত্বে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য নাসির উদ্দিন, বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান প্রমুখ।