বরিশালে বিএনপির সমাবেশ: পরিবহন ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
বরিশালে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার দুদিনের পরিবহন ধর্মঘটের ফলে বরিশাল নগরী কার্যত দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ধর্মঘটের ফলে বাস, লঞ্চসহ গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কীর্তনখোলা নদীতে ভাড়া করা লঞ্চ ও ট্রলারে চড়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছাচ্ছেন বিএনপি'র নেতাকর্মীরা। একটি ডাবল ডেকার লঞ্চে চড়ে কীর্তনখোলা নদীর তীরে বিএনপি'র সমাবেশের পাশে কয়েকশ নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
তবে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে সাধারণ মানুষের। যাত্রীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোনো গণপরিবহন না পাওয়ায় তারা গুরুত্বপূর্ণ নানা কাজে যেতে পারছেন না।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মজিবুর রহমান। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন কোনো গাড়ি পেলেন না, তখন একটি পেডেল রিকশা ভাড়া করে কিছুদূর এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পিরোজপুর থেকে বিভিন্ন থ্রি হুইলারে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন মজিবুর এবং পিরোজপুর পর্যন্ত এসেছেন বাসে করে।
অন্যদিকে, ঝালকাঠি থেকে রিকশায় অসুস্থ বাবাকে নিয়ে একই জায়গায় এসেছেন আবদুল্লাহ। বরিশালের সবগুলো বাসস্ট্যান্ডেই একই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শত শত মানুষ।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য নিয়মিত অনেক রোগী এলেও, শুক্রবার সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের আনাগোনা ছিল খুবই কম।
তবে পরিবহন ধর্মঘটকে নিজেদের জন্য কোনো বাধাই মনে করছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফুর রহমান দিপু বলেন, "আমরা মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য আগেই লঞ্চ ভাড়া করেছি। একতলা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হলেও ডাবল ডেকার লঞ্চ চলছে।"
তারা লঞ্চটিতে খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন এবং নেতাকর্মীরা আজ রাতে লঞ্চেই থাকবেন বলে জানান তিনি। প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী লঞ্চে এসেছেন এবং বৈঠক শেষে লঞ্চে ফিরবেন।
এদিকে, বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা থেকে ট্রলারে করে আসছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বরিশাল শহর কীর্তনখোলা নদীবেষ্টিত হওয়ায় তারা নদীর তীরে যেকোনো সুবিধাজনক জায়গায় নামতে পা্রছেন।
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, "আমাদের নেতাকর্মীদের নৌ-রুট ব্যবহার করতে হবে, যদিও এখানে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।"
ভোলার নেতা হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, "আমি প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার জনের জন্য খাবার তৈরি করি এবং সভাস্থলে খাবার পরিবেশন করি। আগামীকাল দুপুরে প্রায় দশ হাজার নেতাকর্মীর জন্য খাবার তৈরি করছি।" বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সমাবেশের অতিথিরা শুক্রবার ঢাকা থেকে বিমানে করে বরিশাল এসে পৌঁছেছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল হক জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ প্রতিটি প্রবেশ পয়েন্টে সব ধরনের যানবাহন চেক করছে।