প্রতি কেজি আলুর দাম ৪০০ টাকা!
দিনাজপুরের বাজারে উঠেছে নতুন জাতের আলু, যার দাম প্রতি কেজি ৪০০ টাকা । শুনতে অবিশ্বাস্যকর হলেও এই দামেই দিনাজপুরের বাজারে বিক্রি হয়েছে নতুন জাতের আলু।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দিনাজপুর রেলওয়ে বাজারে এই আগাম জাতের আলু ওঠে। তবে পরিমাণে ছিল খুবই কম। মাত্র ১৫ কেজি নতুন আলু নিয়ে বাজারে বসেছিলেন দুই ব্যবসায়ী।
একে তো নতুন সবজি, তার পাশাপাশি নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করেই আলুর দাম এত চড়া বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাই আকাশচুম্বী হলেও ক্রেতারা এই দামে কিংবা এর কাছাকাছি দামেই ক্রয় করেছেন এই জাতের আলু।
সূর্য কুমার ও টিয়া নামের দুইজন খুচরা সবজি বিক্রেতা পাইকারী বাজার থেকে আলু নিয়ে আসেন। এর মধ্যে সূর্য কুমার ১০ কেজি ও টিয়া পাঁচ কেজি আলু নিয়ে এসেছিলেন।
পরিমাণে কম করে হলেও নতুন জাতের আলু কিনেছেন ক্রেতারা। কেউ ক্রয় করেছেন ১০০ গ্রাম, কেউ ২০০ বা ২৫০ গ্রাম, কেউবা আবার ক্রয় করেছেন ৫০০ গ্রাম।
৪০০ টাকা আলুর কেজি বিষয়টি জানতে পেরে এই প্রতিবেদক দুপুরে যান রেলওয়ে বাজারে। সেখানে দেখা যায়, দুইজন ক্রেতা আলু কিনছেন ২০০ গ্রাম করে, যার দাম পড়েছে ৮০ টাকা। অর্থাৎ ৩২০ টাকা কেজি করে।
তবে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সকালে ৪০০ টাকা কেজি দরেই আলু বিক্রি করেছেন তিনি। দুপুরে ক্রেতা কম আর আলুও প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় ৩২০ টাকা কেজি দরেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। কারণ আলুর এই দাম আগামীকাল আর থাকবে না।
জানা যায়, বাংলা দিনপঞ্জিকার (ভারতীয় বা হিন্দুমতে) অগ্রহায়ন মাসের এক তারিখে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করেন। এ উৎসবে ভগবানের উদ্দেশ্যে যা কিছু নিবেদন করা হয় এবং নিজেরাও যা কিছু আহার করেন, তা সবই নতুন। নতুন ধানের ভাত ও পায়েসের পাশাপাশি শাকসবজি ও তরিতরকারির রান্নাও হয় নতুন ফসল দিয়ে।
এখনও বাজারে ওঠেনি নতুন আলু। এই আলু উঠতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো। কিন্তু এরই মধ্যে চলে আসবে নবান্ন উৎসব। তাই এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ১৫ কেজি আলু নিয়ে বসেছিলেন দুই খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসবে ভগবানকে নিবেদন এবং নিজেদের আহারের জন্যই বেশি দাম দিয়ে হলেও আগাম জাতের আলু ক্রয় করেছেন।
রেলওয়ে বাজারে আলু ক্রয় করতে আসা প্রকাশ সরকার বলেন, 'শুক্রবার আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন পালন করবেন। এই নবান্নে সবকিছু্রই নতুন হওয়া প্রয়োজন। চা, শাক-সবজী, সবকিছুই নতুন। এইসব নতুন খাবার দিয়েই পালন করা হয় নবান্ন।'
তিনি আরও বলেন, 'নতুন সবজি হিসেবে বিক্রেতারা ৪০০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন। যেহেতু বাজারে আলু নেই, তাই এই দামে বাধ্য হয়েই আলু ক্রয় করতে হয়েছে। কিন্তু দামটা একটু বেশিই হয়েছে। ৪০০ টাকা কেজি মানে দুই কেজি আলুর দামে এক কেজি খাসির মাংস পাওয়া যাবে।'
আরেক ক্রেতা মানিক বসাক বলেন, 'নবান্ন উৎসবে নতুন আলু লাগবে। তাই এই দামে আলু কিনেছি বাধ্য হয়ে। দাম বেশি বলে মাত্র ৫০০ গ্রাম আলু কিনেছি। তবে আমার কাছে একটু কম নিয়েছে। আমি ৩০০ টাকা দরে কিনেছি। শেষ সময় তো, তাই হয়তো দিয়েছে এই দামে।'
ক্রেতা সৌরভ অধিকারী বলেন, '৪০০ টাকা আলুর কেজি। কয়েকদিন ধরেই নতুন আলু খুজছি বাজারে। আজকে আলু বাজারে উঠেছে কিন্তু এত দামে তো ক্রয় করার ক্ষমতা আমাদের নাই। তাই ৪০ টাকা দিয়ে ১০০ গ্রাম আলু ক্রয় করেছি।'
আলু বিক্রেতা টিয়া বলেন, 'আমি সকালে এই আলু কিনেছি কৃষকের কাছ থেকে। নবান্নের সময় আলুর দাম বেশি থাকে। সকালে এই আলু ক্রয় করেছি বেশি দামে। নতুন আলু তো বাজারে একেবারেই কম। শুধু আলুই নয়, নতুন সবজি হিসেবে ওল বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজি, সজনে বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা কেজি হিসেবে। নতুন আলু এখনও ওঠেনি, সজনে গাছে নাই আর ওল উঠার সময় এটা নয়। তাই একটু বেশি দাম।'
আলু বিক্রেতা সূর্য বলেন, 'সকালে আমি বাহাদুরবাজার থেকে পাইকারী হিসেবে ১০ কেজি আলু কিনেছি ২৪০ টাকা কেজি হিসেবে। এখানে আনার পর বিক্রি করেছি ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি হিসেবে। নতুন সবজি ভগবানকে দিতে হয়, তাই ক্রেতারা নিয়েছে কেউ ১০০ গ্রাম, কেউ ২০০-২৫০ গ্রাম আবার কেউ ৫০০ গ্রাম করে ক্রয় করেছে।'