সাবেক এমপি বদির ৪ ভাইসহ আত্মসমর্পণকারী ১০১ ইয়াবা ব্যবসায়ীর ১.৫ বছর কারাদণ্ড
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া ও টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাইসহ আত্মসমর্পনকারী ১০১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশের ২ টি মামলার রায়ে ইয়াবা মামলায় প্রত্যেককে ১ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
একইসঙ্গে অস্ত্র মামলায় সকলকে খালাসের আদেশ দেওয়া হয়।
আজ বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে এ রায় দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।
রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, 'কক্সবাজারের টেকনাফে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারী ১০১ জন ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশের ২টি মামলায় অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। এতে দায়ের হওয়া ২টি মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পাওয়ার যোগ্য হলেও এটা সামাজিকভাবে ভুল বার্তা যাবে। যেহেতু এরা সকলেই নিজদের ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাই অস্ত্র মামলায় এদের খালাস দেয়া হলেও মাদক মামলায় সাজা ও জরিমানা করা হয়েছে।'
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আসামিদের তালিকায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির চার ভাই (আব্দুল আমিন, আব্দুর শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল রহমান); ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু; চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম।
আরও আছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ ও তার বড় ভাই আব্দুর রহমান; বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের ছেলে দিদার মিয়া; টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ; টেকনাফ সদর ইউনিয়নের এনামুল হক এনাম মেম্বারসহ অনেকে।
রায় ঘোষণাকালে ১৭ জন আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিল ৮৪ জন।
মামলার এজাহারের বিবরণ বলছে, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার টেকনাফ সৈকতের নিকটবর্তী এলাকায় ইয়াবা ও অস্ত্র সহ একদল ইয়াবা কারবারি অবস্থান নেওয়ার খবরে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই সময় পুলিশের কাছে ১০২ জন আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ওই দিনে টেকনাফ সদরের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০ টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন।
ওইদিনই আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা
হয়। বাদী হয়ে মামলাটি করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম।
মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে সব আসামীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১০২ জন আসামীর মধ্যে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ এর আদালত ১০১ আসামীর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সব আসামীর উপস্থিতিতে শুনানী শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন।
বিচার শেষে ১৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়।