জাহাজ চালুর দাবিতে ৪ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে ধর্মঘটের ডাক
কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে দ্রুত জাহাজ চালু না হলে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
রোববার বিকালে দ্বীপে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এমন কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
বিকেলে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট থেকে বাজার পর্যন্ত স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি, স্পিডবোট মালিক সমিতি, সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতি, অটোরিক্সা মালিক সমিতি, রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, দোকান-পাট ও বাজার সমিতি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন।
মানববন্ধনে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম বলেন, "টেকনাফ থেকে জাহাজ চালু না হলে এ দ্বীপের মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। আয়-রোজগার না থাকায় আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।"
সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ আবুল হোসাইন বলেন, "আমাদের পেটে লাথি না মেরে, আমাদেরকে একেবারেই মেরে সাগরে ভাসিয়ে দিন। টেকনাফ থেকে জাহাজ চালু না হওয়ার অর্থ আমাদের পেটে লাথি মারার সমান।"
হোটেল-রিসোর্ট মালিক এসোসিয়েশন সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, "টেকনাফ থেকে জাহাজ চালু না হওয়ার জন্যে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তারা নাব্যতা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে নিজেদের একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইছে এবং কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে গলাটিপে মেরে ফেলার কৌশলে নেমেছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করার বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঐসব পরিবেশের নামধারী সংগঠনগুলো। এরা পরিবেশের নাম দিয়ে বরং দ্বীপের পরিবেশের ক্ষতি করছে।"
তিনি আরও বলেন, এসময় সেন্টমার্টিনের সকল আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানপাটসহ সবধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
হোটেল-রিসোর্ট মালিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, "অহেতুক নাব্যতা সংকট দেখিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। টেকনাফ বন্দরে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক জাহাজ ও কার্গো ট্রলার প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। এই বাণিজ্যিক যানবাহনগুলো পর্যটকবাহী জাহাজের চেয়ে আকারে অনেক বড় এবং অনেক বেশি পণ্য বহন করেন। এতো বড় বড় বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজ-কার্গো চলাচল করতে পারলে পর্যটকবাহী জাহাজ কেন চলতে পারবে না?"
জানা যায়, টেকনাফ থেকে নাফ নদী হয়ে প্রতিবছর ৮ থেকে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজে প্রতিদিন সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেন ৮ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন এ তিন নৌপথে ১২টি জাহাজ চলাচল করছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ চলাচল করত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সাগর উত্তাল ও কালবৈশাখীর আশঙ্কায় তিনটি নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে আরও একটি জাহাজ চলাচল শুরু হবে। এর মধ্যেই দ্বীপে এমন কর্মসূচির ঘোষণা করা হলো।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো কামরুজ্জামান বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের নাফনদীর মোহনা ও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় একাধিক ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পর্যটকসহ জাহাজ ডুবোচরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ার খবর গণমাধ্যমেও একাধিবার এসেছে। এর মধ্যে ডুবোচরে আটকা পড়ে গত এপ্রিল ও মে মাসে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি করা পণ্য নিয়ে আসা ট্রলারের মধ্যে
কাঠভর্তি সাতটির বেশি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। সবদিক বিবেচনার পাশাপাশি পযর্টকদের নিরাপত্তার জন্য এবার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে নির্দেশনা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।