জাহাজভাঙায় আবারও শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ
জাহাজভাঙায় আবারও শীর্ষে এসেছে বাংলাদেশের নাম। জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা (আঙ্কটাড)-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জাহাজ বাংলাদেশে ভাঙা হয়ে থাকে।
২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ মাসে বিশ্বে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৮.০২ মিলিয়ন টন জাহাজ বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছে। ২৯ নভেম্বর প্রকাশিত 'রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০২২' প্রতিবেদন অনুসারে এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ ছিল তেলের ট্যাঙ্কার, ২৫ শতাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার ও ৯ শতাংশ তরলীকৃত গ্যাস ক্যারিয়ার।
গত বছরের একই সময়ে বিশ্বের প্রায় ৫৪ শতাংশ তেলের ট্যাঙ্কার, ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার এবং প্রায় ৫ শতাংশ তরলীকৃত গ্যাসের ক্যারিয়ার বাংলাদেশে ভাঙা হয়।
২০২১ সালে বাংলাদেশসহ পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক এই চারদেশে বিশ্বের ৯৬ শতাংশ জাহাজ ভাঙা হয়।
২০২১ সালে বিশ্বে জাহাজভাঙার পরিমাণ ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমে ১৫.৩ মিলিয়ন টনে নেমে আসলেও বাংলাদেশে একই সময়ে জাহাজ ভাঙা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে প্রতিবেদনে বেশকিছু কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ এর জন্য আরোপিত বিধিনিষেধের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে বৈদেশিক রিজার্ভ রক্ষায় লেটার অন ক্রেডিটে জাহাজ আমদানি সীমিত করা।
কমেছে বাণিজ্য
প্রতিবেদন অনুসারে ২০২১ সালে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেও ২০২২ সালে ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প।
২০২১ সালে এই শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। সামগ্রিক চালানের পরিমাণ ছিল ১১ বিলিয়ন টন। ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস থেকে ২০২১ সালে ৭ শতাংশ পয়েন্টের উন্নতি ঘটে।
আঙ্কটাডের ধারণা অনুযায়ী, ২০২২ সালে মাঝারি থেকে এক দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে সামুদ্রিক বাণিজ্য। ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে গড়ে বার্ষিক দুই দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হবে যা গত তিন দশকের গড়ে তিন দশমিক ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির তুলনায় মন্থর হবে।
ফ্রেইট চার্জ সর্বকালের সর্বোচ্চ
২০২১ সালে মহামারির কারণে সৃষ্ট জটিলতা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি শিপিং সক্ষমতার ঘাটতি ও বাণিজ্য সরবরাহের পরিমাণ পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রেইট চার্জ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় জাহাজে মালামাল পরিবহনের খরচ মহামারির আগের সময়ের তুলনায় চারগুণ বেশি ছিল।
২০২২ সালের শুরু থেকে কিছু রুটে মাল পরিবহন খরচ কমতে শুরু করে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে হুট করেই তা নেমে আসে।
মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থিতিশীল ফ্রেইট চার্জ, জাহাজ ও কনটেইনার জট, বন্দর বন্ধ থাকা এবং এরপর নতুন করে চাহিদা বৃদ্ধি সবই জনজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
'বর্তমান সরবরাহ শৃঙ্খল সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তনগুলো মোকাবেলা করতে শিখতে হবে। এর মধ্যে আছে অন্তর্বর্তী পরিকাঠামো, নৌবহর সারাই, বন্দর কার্যক্রম ও বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধিকরণ', বলেন আঙ্কটাডের সেক্রেটারি জেনারেল রেবেকা গ্রিনিস্প্যান।
প্রতিবেদনের অনুমান অনুসারে ২০২২ সালের প্রথম দিকে শস্যের উচ্চ মূল্য ও ড্রাই বাল্ক পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যশস্যের দাম এক দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।
'মাল পরিবহনের উচ্চ হারের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ শৃঙ্গল ব্যাহত হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়েছে,' বলেন আঙ্কট্যাডের প্রযুক্তি ও লজিস্টিক বিভাগের পরিচালক শামিকা এন সিরিমানে।