দেশীয় পণ্য কিনতে এসএমই মেলায় উপচে পড়া ভিড়, খুশি উদ্যোক্তারা
রাজধানীতে চলছে ১০ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা। শতভাগ দেশিয় পণ্য কিনতে মেলায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে খুশি বিক্রেতারাও।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা এবং প্রচার-প্রসারের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন দশম বারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত শতভাগ দেশী পণ্যের এই মেলায় রয়েছে ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের ৩৫০টি স্টল।
আয়োজকরা বলছেন, এমন উপচে পড়া ভিড়ের কারণ- স্থানীয়ভাবে তৈরি উন্নতমানের অনেক পণ্য উঠেছে এবারের মেলায়।
গত ২৪ নভেম্বর শুরু হওয়া ১০ দিনব্যাপী এই মেলার শেষ দিন আজ শনিবার (৩ ডিসেম্বর)। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় ছিল অনেক বেশি। বিকেলে মেলা ঘুরে দেখা প্রতিটি স্টলেই ভিড়। ক্রেতা ও দর্শনারর্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল মেলাপ্রঙ্গন।
বেসরকারি চাকুরিজীবী মোহম্মদ হাসান রজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন; দুই হাতে তার ৮ টি শপিং ব্যাগ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি জানান, মেলা থেকে পাটের বহুমুখী পণ্য, মাটির পাত্র, নকশি কাঁথা ও জামদানি শাড়ি কিনেছেন।
"পণ্যগুলো শতভাগ দেশি, বৈচিত্রময় এবং গুণগত মানও অনেক ভালো, তাই আজ শুক্রবার পেয়ে কিনতে এসেছি," যোগ করেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি স্টলেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় বিভিন্ন সেক্টরের উদ্যোক্তারা মেলায় তাদের স্টল দিয়েছেন।
মেলায় পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, পোশাক, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার, হ্যান্ডিক্র্যাফটস, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হারবাল পণ্য, প্লাস্টিক ও সিনথেটিকস্, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, প্রযুক্তি পণ্য, শতরঞ্জি, ডায়াবেটিক চাল ও আটা ইত্যাদি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন উদ্যোক্তরা। ঘুরে ঘুরে সেগুলো কিনছেন ক্রেতারা। কেউ আবার তথ্য নিয়ে রাখছেন ।
মেলায় অংশ নিয়েছে অর্থা; প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করছে বেড শিট, বালিশ, কুশন, ম্যাট্রেস সহ নানান ধরনের উইন্টার কালেকশন পণ্য। কথা হয় অর্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও নিতাই সরকারের সঙ্গে । টিবিএসকে তিনি বলেন, "পণ্যগুলো আমাদের প্রতিষ্ঠানেই তৈরি। মানসম্পন্ন ও তুলনামূলক দামে কম হওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা রয়েছে মেলায়। প্রতি পিস কমফোর্টার আমরা বিক্রি করছি ১ হাজার ১৯৯ টাকায়।"
আরেক কোম্পানি কিষাণঘর এগ্রো বিক্রি করে কাজুবাদাম, কফি, আম এবং আনারসের মতো একাধিক ফল ও বাদাম থেকে তৈরি পণ্য।
বান্দরবানে তাদের ফ্যাক্টরি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ তারেকুল ইসলাম বলেন, "ক্রেতাদের কাছ থেকে মেলায় আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। আমরা মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করছি। দেশে উৎপাদন হওয়ায় আমদানি করা পণ্যের চেয়ে আমাদের পণ্যের দাম তুলনামূলক কম।"
জামদানি লাভার্স-এর স্টলে বিক্রি হচ্ছে জামদানি শাড়ি, পাঞ্চাবি ও থ্রিপিস। স্টলে কথা হয় বিক্রয় কর্মী মোহম্মদ হাসানুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, "আমাদের এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। তবে আমাদের প্রচার হয়েছে বেশি। মেলায় আমরা অংশ নেই মূলত আমাদের পণ্য প্রচারের জন্য।"
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমাদের মেলায় প্রতিটি মানুষের আগ্রহ আছে। স্থানীয় উদ্যেক্তাদের তৈরি পণ্যের মান ভালো। যেহেতু কোয়ালিটি পণ্য আছে, যারা মেলায় আসবেন তারা হতাশ হবেন না।"
তিনি বলেন, "গত বছর ১২ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে; আর ১৭ কোটি টাকার ক্রয় অর্ডার পাওয়া গেছে। এবার দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ২৫ কোটি টাকার নগদ বিক্রি এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্ডার হবে বলে আশা করছি।"
"এছাড়া, আমরা উদ্যেক্তাদের পণ্য প্রচারে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও প্রটকল দিলে মেলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি। এতে উদ্যেক্তাদের সঙ্গে তাদের একটি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে," যোগ করেন তিনি।