১১ বছরে হোটেল, রেস্টুরেন্টে তৈরি হয়েছে ১১ লাখেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান
গত ১১ বছরে সারাদেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্টে প্রায় ১১ লাখ ৬৮ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট সার্ভে ২০২১-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
সোমবার প্রকাশিত বিবিএস'র সর্বশেষ খাতভিত্তিক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১০ সালে এই খাতে কর্মরত লোকের সংখ্যা ছিল ৯.০৪ লাখ, যা ২০২১ সালে এক লাফে পৌঁছেছে ২০.৭০ লাখে।
হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে কত মানুষ কর্মরত আছেন এবং জিডিপিতে এই খাতের অবদান বের করতে প্রতি ১০ বছরে এই জরিপ চালানো হয়। আগের সর্বশেষ জরিপটি হয়েছিল ২০১০ সালে এবং এরও আগের জরিপগুলো হয়েছিল ১৯৯২-৯৩ এবং ২০০২-০৩ অর্থবছরে।
এবারের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪, যা ২০১০ সালে ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪। একই সময়ে এই খাতের বার্ষিক মূল্য সংযোজনও ২২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
তবে, মূল্য সংযোজনের মোট পরিমাণ বাড়লেও শতকরা হিসেবে জিডিপিতে হোটেল-রেস্টুরেন্টের অবদান কমে এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিএস'র প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপিতে ১.৫০ শতাংশ অবদান ছিল হোটেল ও রেস্টরেন্টগুলোর। সর্বশেষ হিসাবে এই অবদান নেমে এসেছে ১.১০ শতাংশে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৬ হাজার ৭৩৪টি হোটেল-রেস্টুরেন্টের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। সংস্থার ১৫১ জন গণনাকারী ও ৮০ জন সুপারভাইজার মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এতে ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারি ও ২০১৯ সালের বিজনেস ডিরেক্টরির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
জরিপটির ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্ব পালন শেষে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ময়মনসিংহ অফিসে অঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্বে নিয়োজিত আক্তার হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যঅন্ডার্ডকে বলেন, "এক দশকে সারা দেশের হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা কত বেড়েছে ও জিডিপিতে এই খাত থেকে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন হচ্ছে, সেই তথ্য তুলে আনতেই জরিপটি করা হয়েছে।"
বাড়ছে পরিচালনা ব্যয়
২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ১৫৯.২ কোটি টাকা আয় থেকে হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোর বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ১৭৩.১ কোটি টাকা। এ হিসাবে মূল্য সংযোজন হয়েছে আয়ের ৩৪ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সর্বশেষ জরিপে মূল্য সংযোজন ১.২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মোট আয়ের ৩২.৮০ শতাংশে।
জরিপের তথ্য বলছে, হোটেল রেস্টেুরেন্টে কাজ করা শ্রমিকরা বছরে এখন গড়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭১০টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৫৬০ টাকা। এ হিসাবে মজুরির হার বেড়েছে ২৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এক জন শ্রমিকের পেছনে গড়ে ব্যয় বেড়েছে বছরে ১ লাখ ১২ হাজার ১৫০ টাকা।
আগে হোটেলগুলো মোট আয়ের ১০.১৭ শতাংশ পারিশ্রমিকের পেছনে ব্যয় করলেও এখন শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২৬.৬৪ শতাংশ।
প্রাথমিক প্রতিবেদনের সঙ্গে বড় অসঙ্গতি
গত জুনে প্রকাশিত প্রাথমিক জরিপের ফলাফলে দাবি করা হয়েছিল, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে মূল্য সংযোজন ৮৭ হাজার ৯২৬.৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই অঙ্ক নেমে এসেছে ৩৮ হাজার ৭০৩.৬ কোটি টাকায়। দুই প্রতিবেদনের ফলাফলে প্রায় ৫৬ শতাংশের পার্থক্য উঠে এসেছে।
এছাড়া, দুই প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সমান দেখানো হলেও প্রাথমিক প্রতিবেদনের চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কর্মসংস্থানের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমে এসেছে।