বিএনপি সমাবেশকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ঢাকায় যানবাহন ছিল কম, যাত্রীদের ভোগান্তি
হাতিরপুলে একটি দোকানের কর্মচারী মো. মনির গতকাল (৮ ডিসেম্বর) দুপুর একটার দিকে শেওরাপাড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। বাংলামোটর সিগনালে তার গন্তব্যের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রায় ১.১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তিনি কোন বাস পান নি।
"আমি দুপুর একটার দিকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি, এখন বাজে সোয়া দুইটা, কিন্তু কোন বাস পাইনি। এর মধ্যে একটা বাস গিয়েছে কিন্তু সেটাও যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। গেটের মধ্যেও লোক ঝুলে ছিল। তিল ধারণের জায়গা ছিল না," বলেন অসহায় মনির।
তিনি যোগ করেন, আগে এখানে দাঁড়ানোর সাথে সাথে একই সময়ে কয়েকটি বাস পেতেন, কিন্তু কাল বাস পাননি।
শুধু বাংলামোটর নয়, ঢাকা শহরে অন্যন্য রুটেও একইভাবে সিটি বাসের সংখ্যা অনেক কম দেখা গেছে। ফলে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। অনেকে পায়ে হেঁটে, রিকশায় ও অন্য যানে গন্তব্যে গিয়েছেন।
গুলিস্তান যাওয়ার উদ্দেশ্যে আনোয়ার ও তার স্ত্রী বারডেম হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ঘন্টা খানেক অপেক্ষার পরও কোন বাস পাননি।
"গুলিস্তান যাব। এক ঘন্টার উপরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কোন বাস পাচ্ছি না। বিএনপির সমাবেশের কারণেই মনে হয় বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে", অভিযোগ আনোয়ারের।
এদিকে পরিবহন মালিকরা বাস কমার কারণ হিসেবে যাত্রী কম থাকার কথা জানান।
বিকাশ পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ টিবিএসকে বলেন, "সকালে আমাদের সব বাসই বেরিয়েছিল। কিন্তু দিন বাড়ার সাথে সাথে রাস্তায় যাত্রী কমতে থাকে। বেলা ১০টার দিকে যাত্রী এত কমে যায় যে বাসগুলো প্রায় খালিই চলেছে। এত কম যাত্রী নিয়ে চললে তেলের দামও ওঠে না। তাই বাসগুলো এক-দুই ট্রিপ দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। বিকেলে আবার স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি।"
এদিকে আট নাম্বার বাসের এক মালিক লিটন হোসেন জানান সব বাসই রাস্তায় আছে কিন্তু যাত্রী কম থাকায় বাসের গতি কম।
"সব বাসই রাস্তায় আছে। কিন্তু যাত্রী যেহেতু খুবই কম, তাই বাসগুলো এক এক স্টেশনে একটু বেশি সময় থাকছে। আবার যাত্রীর আশায় কম গতিতে চলছে। এসব কারণে যাত্রীদের মনে হতে পারে শহরে বাস কমে গেছে।"
বাস মালিকদের প্রশ্ন করা হয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে, কিভাবে যাত্রী কম বলছেন তারা, এর উত্তরে মালিক সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. শওকত আলী বাবুল স্বীকার করেন, কিছু কিছু পরিবহনের মালিক নাশকতার হতে পারে এই শঙ্কায় বাস নামাননি। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্টাফরা বের হতে চায়নি।
তিনি বলেন, "বুধবার পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের পর অনেক বাস মালিকই আতংকিত। রাস্তায় কোন মিছিল বের হতে পারে, কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে গাড়ি ভাংচুরও করতে পারে, এই ভয়ে তারা (বিশেষ করে পল্টন হয়ে চলা বাসের অনেক মালিক) গাড়ি নামাননি।"
তিনি যোগ করেন, এটা মালিকদের একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কারণ একটি বাস ভাংচুর করলে যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি ৬ মাসেও পোষানো সম্ভব নয়। আবার অনেক গাড়ির ড্রাইভার হেলপার নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেও গাড়ি নিয়ে বের হয়নি।
তবে যেসব ড্রাইভার-হেলপার এইদিন বের হয়েছে তারাও আতংক নিয়েই গাড়ি চালিয়েছে বলে জনিয়েছেন।
"আমরা বাস নিয়ে বের হলেও কিছুটা ভয়তো কাজ করেই। শহরে কিছু একটা হলেই প্রথমে গাড়ি ভাঙ্গা শুরু করে লোকজন", বলেন স্বাধীন গাড়ির ড্রাইভার লিটন।
লাব্বাইক পরিবহনের হেলপার জহির বলেন, "ভয় আছে অনেক, কখন কী ঘটে কে জানে। সেজন্য আমরাও সজাগ দৃষ্টি রাখছি।"
এক প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন, "যাত্রী কম নাই, স্বাভাবিকই আছে। তবে রোডে পরিবহন কম। এই জন্য বাসে প্রচুর ভিড় হচ্ছে।"
এদিকে ট্রাফিক পুলিশও মালিকদের মতই সুর মিলিয়েছেন।
গুলশান ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দিনভর যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
"বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি না থাকলেও রাস্তায় লোকজন ছিলোই। তবে, বেশি মানুষ বাড়ি থেকে বের না হওয়ার কারণেই সম্ভবত যানজট কম।"
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে দেওয়া হয়নি কোনো পরিবহন ধর্মঘট
ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার এক জরুরি বৈঠক শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, ঢাকা মহানগর, শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
তবে, অতীতে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা অগ্নিসংযোগের সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে- এ যুক্তি দেখিয়ে বাস চলাচল সীমিত করার দাবি করেছেন বাস মালিকরা।
তারা আরও বলেন, এবারে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড যাতে না হয় সেজন্য তারা শহরের প্রতিটি বাস টার্মিনাল পাহারা দেবেন।
খন্দকার এনায়েত উল্লাহ শনিবার নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যাতে যানবাহন চলাচলে বাধা না পড়ে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
রাজধানীর প্রবেশমুখে তল্লাশি অব্যহত
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীর প্রবেশমুখে পুলিশের তল্লাশি বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল।
ঢাকার প্রবেশমুখ টঙ্গী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ এলাকায় যানবাহন, বিশেষ করে দুরপাল্লার বাসের ভেতরে ও মোটরসাইকেল থামিয়ে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করছে বলে জানা গেছে।
দূরপাল্লার বাসে উঠে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ-বস্তা খুলে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। এছাড়া সন্দেহজনক মনে হলে পথচারীদের ব্যাগ-বস্তা তল্লাশি করা হচ্ছিল।
এর আগে মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বানচাল করতে তারা রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপন করবেন।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, টঙ্গী, উত্তরা, গাবতলী, পূর্বাচলসহ কয়েকটি স্থানে তারা চেকপোস্ট বসিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন উপ-কমিশনার বলেন, "বুধবার পুলিশ ও বিএনপির লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের পর উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না, তারা শুধু চেক ও তল্লাশি করছে, সবটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।"