চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে অকালেই মারা যাচ্ছেন ৮০% কিডনি রোগী
বাংলাদেশে ডায়ালাইসিস শুরুর পর খরচ বহন করতে না পেরে ছয় মাসের মধ্যেই মারা যান প্রায় ৭০ শতাংশ কিডনি রোগী।
দেশের ৮০ শতাংশ রোগীই দরিদ্র, যাদের সামর্থ নেই কিডনি চিকিৎসার ব্যয় বহন করার। এছাড়া, হাসপাতাল ভেদে কিডনি রোগের চিকিৎসার খরচে রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। এসব গড়মিল দূর করার পাশাপাশি কিডনি রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার ও সামর্থবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন উর রশিদ বলেন, সারাদেশে বছরে ১৮,০০০ কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয়।
"এরমধ্যে ৭০ শতাংশই ডায়ালাইসিস শুরু ৬ মাসের মধ্যে মারা যান। চিকিৎসার খরচ এতো বেশি যে, তারা বহন করতে পারেন না। আমাদের হাসপাতালে মাত্র ১,৬০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল ভেদে এই খরচ ৩,৬০০ থেকে ৬,০০০ পর্যন্ত নেওয়া হয়।"
তিনি বলেন, কিডনি রোগীদের এক বছরে ডায়ালাইসিস খরচ হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে খরচ হয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রথম ৬ মাসে শুধু ওষুধ খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ৪ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ এই খরচ বহন করতে সক্ষম।
"ডায়ালাইসিস করতে না পেরে ৭০ শতাংশ রোগী যে মারা যাচ্ছে, তাদের জন্য কি আমাদের কিছুই করার নাই? কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস, ট্রান্সপ্লান্ট বিনামূল্যে দিতে পারলে সবর্জনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে," যোগ করেন তিনি।
নেপালের উদাহরণ দিয়ে ডাঃ হারুন উর রশিদ বলেন, সেদেশে কিডনি রোগীর চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সরকারের সহায়তায় ফ্রিতে করা হয়।
এছাড়া, পাকিস্তানের সিন্ধু ইনস্টিটিউট অফ ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট (সিআইটিইউ), ৫০০ বেডের হাসপাতালে শুধু ডোনেশনের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের জন্য সবকিছুই করা হয় ফ্রিতে।
"রোগী যদি কোনোভে সিসিটিইউ তে পা দেয়, তখন আর তার একটি পয়সাও খরচের চিন্তা থাকে না। প্রত্যেকটি ডায়ালাইসিস ফ্রি এবং ওষুধও ফ্রি। কিন্তু আমাদের দেশে তা সম্ভব না। আগে ব্যাংকগুলো সিএসআর করতো, এখন তাও করেনা," যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন মেরিস্টোপস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ।