বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পিডিবির পাওনা ১৪২ কোটি টাকা
চট্টগ্রামে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। এতে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী থাকায় বিপাকে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
গত জুন পর্যন্ত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পিডিবির পাওনা ১৪১ কোটি টাকা। পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, নভেম্বর মাস পর্যন্ত হিসাব যোগ করলে বকেয়ার পরিমাণ ১৫০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
মূলত, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাজেট ঘাটতি কিংবা তহবিল সংকটের কারণে নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারে না। আবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে সময়ক্ষেপণ হয়। এছাড়া বিল নিয়ে আপত্তির কারণে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মামলা থাকায় বকেয়া আদায়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, পিডিবি বকেয়া আদায়ে নোটিশ ইস্যু, বৈঠকসহ বিভিন্ন নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বকেয়া পরিশোধ করে।
পিডিবির বকেয়া তালিকায় দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট পাওনায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে সারচার্জই (বকেয়া বিলের সুদ) বেশি।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার সময়মতো অর্থ দিলে বিল পরিশোধে কালক্ষেপণ হবার কথা নয়। পিডিবি বিষয়টাকে বিবেচনায় না নিয়েই অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে।
পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, 'অতিরিক্ত টাকা দাবির বিষয়টি ভিত্তিহীন। বকেয়া পরিশোধ করে না বলেই সুদ জমে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত ছাড়া বকেয়া বিলের সুদ মওকুফের কোন সুযোগ নেই।'
পিডিবির বকেয়া তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের। জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে পিডিবির পাওনা ৫৯ কোটি টাকা।
কর্পোরেশনের পর সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগের। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৩৪ কোটি টাকা। এরপর ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮৪ লাখ টাকা, অন্যান্য ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৫৬ লাখ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৪৯ লাখ টাকা, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ৪৭ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪৬ লাখ টাকা, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৩ লাখ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা) ৪৩ লাখ টাকা, ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৪২ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ- জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বকেয়া বিল ৩৮ লাখ টাকা।
এছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩৭ লাখ টাকা; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩৫ লাখ টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ২৭ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৪ লাখ টাকা, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ২০ লাখ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৫ লাখ টাকা, সুরক্ষা সেবা মন্ত্রণালয় ১১ লাখ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয় ১১ লাখ টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১ লাখ টাকা, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বকেয়া বিল ৫ লাখ টাকা।
বকেয়া পরিশোধ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম বলেন, 'ফান্ড নেই তাই বিল পরিশোধ করা যায় না, অন্য কোন কারণ নেই।'