সারাদেশে বিএনপির যুগপৎ গণমিছিল
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার সারা দেশে গণমিছিল নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, এলডিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী দল।
ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় জামায়াতে ইসলামীর গণমিছিলের খবর পাওয়া গেছে; তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, খালেদা জিয়াসহ আলেম ও ওলামাদের মুক্তির দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামীর সাতক্ষীরা জেলা শাখা। আজ শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শহরের হাটের মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়।
তবে মিছিলের একটি অংশ হাটের মোড় থেকে তুফান মোড়ের দিকে, অপর একটি অংশ সদর উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে জামায়াত অফিসের দিকে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের বাধার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে পাঁচটি ককটেলসহ জামায়াতের ১৬ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি ফখরুল আলম খান বলেন, 'জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা আজ সকালে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। এ সময় ১৬ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কার্যত এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকার হটানোর লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা হচ্ছে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের গণমিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজশাহীতে, আবদুল মঈন খান খুলনায়, নজরুল ইসলাম খান কুমিল্লায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বরিশালে, সেলিমা রহমান গাজীপুরে, ইকবাল হাসান মাহমুদ ময়মনসিংহে থাকবেন।
এছাড়া সিলেটে মো. শাহজাহান, কিশোরগঞ্জে আবদুল আউয়াল মিন্টু, নোয়াখালীতে শামসুজ্জামান, সুনামগঞ্জে আহমেদ আজম খান, নারায়ণগঞ্জে জয়নুল আবেদীন, ফরিদপুরে নিতাই রায় চৌধুরী, বগুড়ায় আমানউল্লাহ আমান, দিনাজপুরে মিজানুর রহমান (মিনু), চাঁদপুরে জয়নুল আবদিন ফারুক, ভোলায় মুজিবুর রহমান সরোয়ার, যশোরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও রাজবাড়ীতে হাবিব-উন নবী খান গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন।
গণমিছিলের আগে গ্রেপ্তার
বিএনপি অভিযোগ করেছে, ঢাকার গণসমাবেশের আগে সরকার যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন, গ্রেপ্তার করেছিল, ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একই কায়দায় দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশের দাবি, তাদের অনেকে পুরোনো মামলার আসামি। অনেকে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
নোয়াখালী থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুধারাম থানার পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে নোয়াখালী পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাছেরসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো মামলার আসামি।
চুয়াডাঙ্গায় নাশকতার মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের সদর উপজেলার পৃথক দুটি জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নীলফামারীতে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকের অভিযোগে জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির খায়রুল আনামসহ (৫০) সাত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সদরের কুখাপাড়া ও কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ।
তিনি বলেন, নোয়াখালীতে গণমিছিলের প্রস্তুতি বৈঠক থেকে কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপির ২৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতভর নোয়াখালীতে বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালানো হয় এবং তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়। গণমিছিলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের ফোন করে গায়েবি মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি ঢাকাসহ সারা দেশে ২৪ ডিসেম্বর (আজ) এই গণমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল। একই দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হওয়ায় বিএনপি ঢাকার গণমিছিলের তারিখ পাল্টে ৩০ ডিসেম্বর করে।