ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিন: রাজনীতি বন্ধে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বিধিমালার প্রস্তাব
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় তিনি ডিসিদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি শুধু প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেন।
এরপর বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থা, অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর উপর আলোচনা হয়েছে।
রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের সম্মেলন শেষ হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নৈশভোজের পর শেষ হবে এবারের ডিসি সম্মেলন।
সম্মেলনের প্রথম দিন জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ৩০টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের কোনো কোনোটিতে সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আর কিছু কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে সরকার একমত হতে পারেনি।
ডিসিদের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বক্তব্যে তা উঠে এসেছে।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য 'সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা'র মতোই সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করার যে প্রস্তাব ঝিনাইদহের ডিসি দিয়েছেন তাতে সায় দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। এতে করে বেসরকারি শিক্ষকরা দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, 'শিক্ষা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশনের চ্যানেল চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। এটি খুবই যৌক্তিক দাবি। শিক্ষা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন নিয়ে কাজ চলছে। একইসঙ্গে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য বিধিমালা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। এটিও ভালো প্রস্তাব। এটা নিয়েও কাজ চলছে।'
তিনি বলেন, 'মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) আলাদা করার প্রস্তাব তুলেছেন ডিসিরা। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও অনেক ভাবার রয়েছে।'
দীপু মনি বলেন, 'জেলা প্রশাসকরা হাওর অঞ্চলের ছুটির সময়টা পরিবর্তন করার কথা বলেছেন। এটি নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভিন্ন সময়ে বন্যা হয়। অঞ্চলভিত্তিক ঋতুর ভিন্নতাও আছে। এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপঞ্জি করতে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি।'
শিক্ষা কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটাকে সুস্পষ্ট করে ভাগ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা করতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি, এটি খুবই যুক্তিযুক্ত। এটা করতে পারলে বিভ্রান্তিটাও থাকবে না।'
কক্সবাজারে একটি মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় কি না এবং প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরির প্রস্তাব প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, টেকনিক্যাল স্কুল তৈরির প্রকল্পের কাজ চলছে।
দক্ষিণাঞ্চলে আরো অর্থনৈতিক অঞ্চল
বরিশাল শহরে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (ইকোনমিক জোন অথরিটি) আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ভোলার পাশাপাশি বরিশালের অন্য জায়গায় ইকোনমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল) করার বিষয়ে ডিসিদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, 'ডিসিদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। পদ্মাসেতু হওয়ার পর, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যে নতুন সম্ভাবনা হয়েছে, সে জন্য নতুন প্রস্তাব ছিল। প্রস্তাবগুলো ছিল বরিশাল বিভাগকে দিয়ে। বরিশাল শহরে ইকোনমিক জোন অথরিটির আঞ্চলিক অফিস করা, ভোলাতে ইকোনমিক জোন করা, বরিশালে অন্য কোথাও ইকোনমিক জোন করা সম্ভব কিনা। আর একটা ছিল নরসিংদীতে ইকোনমিক জোন করা। এ প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে। সম্ভাবনার সম্ভাব্যতা যাচাই করার পর যদি দেখা যায় যে এগুলো করা সম্ভব, তাহলে করবো।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজস্ব আদায়ে ২০২২ সালের একটা প্রস্তাব ছিল- নওগাঁর ছাপাহারে একটা শুল্ক স্টেশন করার। সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে উত্তর দেওয়া হয়েছে।'
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বড় বড় প্রকল্প বন্ধ করা বা প্রকল্পের গুরুত্বের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. মসিউর বলেন, 'এ বিষয়ে সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা প্রকাশিত। সেটা আপনারা জানেন। এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা কোন প্রশ্ন করেনি।'
'অনেক জায়গায় দেখা যায় ব্রিজ আছে, সংযোগ সেতু নেই। আবার ব্রিজ-কালভার্ট এমন জায়গায় হয় যেখানে জনবসতি নেই। এসব বিষয়ে ডিসিরা প্রশ্ন তুলেছেন। অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। এসব বিষয়ে ভবিষ্যতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে', বলেন মসিউর রহমান।