ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন: ভোটার উপস্থিতি নেই, এখনও 'নিখোঁজ' স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ
নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছে। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় ১৩২টি কেন্দ্রে একযোগে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভোটকেন্দ্র, উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড্ডাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। তবে ফাঁকা কেন্দ্রেই সতর্ক অবস্থানে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শীতের সকাল হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম। সকাল সোয়া ৯টার দিকে প্রথম ভোটটি পড়েছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছি।"
সরাইল উপজেলার উচালিয়া পাড়ার বাসিন্দা ও ভোটার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, "সরাইল-আশুগঞ্জের মধ্যে সরাইলে ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের সাথে মিশে যাওয়ায় তার প্রতি চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এটার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। ফলে অনাগ্রহ থেকে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।"
আরেক ভোটার সরাইলের চানমনিপাড়ার বাসিন্দা নুরু মিয়াও বলেন, "নির্বাচনে ভালো প্রার্থী নেই। আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া সম্পর্কে ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউল হক মৃধাও ভোটে নেই- এসব কারণে ভোটারদের আগ্রহ কম।"
আশুগঞ্জের সোহাগপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টা ০৫ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৫০টি। তবে এ কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৪১টি।
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার সৈয়দ ইসরাফিল বলেন, সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম। ফাঁকে ফাঁকে ভোটার আসছেন। দুপুরের পর ভোটার সংখ্যা বাড়ার আশা করছেন তিনিও।
ভোটগ্রহণ নিরাপদ এবং নির্বিঘ্নে করতে ১১০০ পুলিশ সদস্য, ১৫৮৪ জন আনসার সদস্য, ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য এবং র্যাবের ১০টি টিম কাজ করছে। এছাড়া ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- বিএনপির দলছুট নেতা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাষানী এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম।
তবে সাত্তারের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রচারণার কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন তিনি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদকেই ধরা হচ্ছে।
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ 'নিখোঁজ' আছেন বলে দাবি তার পরিবারের। এখনও পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদিও গত রোববার আসিফের স্ত্রী মেহেরুননিছা এবং বাড়ির কেয়ারটেকারের ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শোনা গেছে- পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই স্বেচ্ছায় 'আত্মগোপন' করে আছেন তিনি। ঘটনার চারদিন পর আসিফের সন্ধান এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন মেহেরুন নিছা।
উল্লেখ্য, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আব্দুস সাত্তারই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে তার পদত্যাগে শূন্য হয় আসনটি। এরপর তিনি আবারও ভোটে দাঁড়ান।