হকার ঠেকাতে পথচারীদেরকেও হাতিরঝিলের উন্মুক্ত স্থানে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে রাজউক
হকারদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার দৃশ্যত প্রচেষ্টায় কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি উন্মুক্ত স্থান ঘেরাও করে সেখানে চারা রোপণের জন্য মানুষের বসার জায়গা ভেঙে ফেলেছে। ফলে সংকুচিত হয়ে আসছে হাতিরঝিলে জনসাধারণের বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত স্থান।
তবে, যারা নিয়মিত পার্কে যান তারা বলেছেন, এলাকাটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গৃহীত পদক্ষেপটি হাস্যকর এবং অব্যবস্থাপনার লক্ষণ। তাদের ভাষ্যমতে, কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দিয়ে এলাকাটিকে হকারমুক্ত রাখা যেত। তা না করে জনগণকে এই উন্মুক্ত জায়গা উপভোগ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হাতিরঝিলের নিউ ইস্কাটন অংশে গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের পাশে কয়েকটি উন্মুক্ত জায়গা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা।
বিয়াম ফাউন্ডেশনের একটি ভবনের পাশে গাছগাছালিপূর্ণ এলাকায় সিমেন্টের বেঞ্চ ভেঙ্গে সেখানে সবজি লাগানো হয়েছে। ওই এলাকার ছায়া প্রদানকারী বড় গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।
তাছাড়া, বাংলামোটরের কাছে অবস্থিত হাতিরঝিলের আরেকটি অংশও আগে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। সে জায়গাটি এখন স্থানীয় লোকজন মুরগি পালন এবং আবর্জনা ফেলার জন্য ব্যবহার করে।
খলিল মিয়া নামক হাতিরঝিলের একজন নিরাপত্তারক্ষী টিবিএসকে বলেন, "রাজউকের কর্মকর্তারা প্রায় এক বছর আগে এসব এলাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রাজউকের কর্মীরাই বর্তমানে সেখানে বাগানের দেখভাল করছেন। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।"
নিউ ইস্কাটনের বাসিন্দা তসলিমুল আলম টিবিএসকে বলেন, "রাজউক এসব এলাকায় আমাদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে আমাদের অধিকার খর্ব করেছে। সকালে বা বিকেলে হাঁটার পর আমরা এখানে এসে বসতে পারতাম, কিন্তু এখন আমরা তা আর করতে পারি না।"
"এছাড়া, বাচ্চারা এখন না পেরে রাস্তায় খেলতে বাধ্য হচ্ছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ," যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র সাকিব হোসেন টিবিএসকে বলে, আগে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে খোলা জায়গায় খেলতো, কিন্তু এখন তারা তা করতে পারে না।
সাকিব বলে, "মাঝে মাঝে আমরা হাতিরঝিল এলাকার ভিতরের রাস্তায় বিকেলে ক্রিকেট খেলি। তবে সেখানে খেলার সময় আমরা সবসময় দুর্ঘটনার ভয়ে থাকি।"
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও নকশা) এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস টিবিএসকে বলেন, "আমরা যে তিনটি উন্মুক্ত স্থান ঘেরাও করেছি, সেগুলো হকাররা অবৈধভাবে দখল করে নিচ্ছিল। সেসব জায়গায় ফুল ও অন্যান্য গাছ লাগানো হবে।"
সবজি চাষ বা আবর্জনা ফেলার জন্য উন্মুক্ত স্থান বন্ধ করার যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, "সেখানে সবজি চাষের কোনো সুযোগ নেই। সেখানে ফুলের চারা জন্মানো হবে। যারা সেসব জায়গায় ময়লা ফেলবে বা অন্যভাবে এ জায়গাগুলোর নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বন্ধ এলাকাটি আবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "না, এসব জায়গা জনসাধারণের জন্য আর উন্মুক্ত করা হবে না।"
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান, টিবিএসকে বলেন, "বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পাবলিক স্পেসের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় জনগণের কমিটি গঠন করা উচিত। কোনো সংস্থার পাবলিক প্লেসে মানুষের প্রবেশে বাধা দেওয়ার অধিকার নেই।"
তিনি আরো বলেন, "রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থার দায়িত্ব খোলা জায়গা রক্ষা করা, যা ইতোমধ্যেই রাজধানীতে বিরল।"