সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ: কানে কম শুনছেন আহতরা
সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন রোগীদের অনেকে কানে স্বাভাবিক মাত্রায় শুনতে পারছেন না।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অপারেটর রিপন মারাক (৩২) দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। রিপন হাঁটু, কোমর ও বুকে আঘাত পেয়েছেন। পাশাপাশি কানেও কম শুনতে পাচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তার ডান কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রিপনের স্ত্রী সুবর্ণা বলেন, 'বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আমার স্বামীর ডান কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাম কানে অল্প শুনতে পেলেও, ডান কানে কোনো কিছু শুনতে পারছেন না।'
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবাসিক চিকিৎসক মো. ফিরোজ জানান, বিস্ফোরণের শব্দে অনেকের কানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বলা যাবে।
অক্সিজেন প্ল্যান্টের প্রধান হিসাবরক্ষক নওশাদ সেলিমের (৫৫) অবস্থাও একই। তিনি জানান, বিস্ফোরণের সময় তিনি অফিসে কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণে তার মাথায় ও মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পাশাপাশি কানেও কম শুনছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ৭ জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন এবং আইসিইউতে দুইজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। দুইজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এর আগে গত শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদম রসুল এলাকায় 'সীমা অক্সিজেন' নামে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত সাতজন নিহত হন। বিস্ফোরণের ধাক্কায় কয়েক মাইল দূরের ভবনগুলোও কেঁপে ওঠে। ভেঙ্গে যায় আবাসিক ভবনের দরজা-জানালাও।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড ও কুমিরা স্টেশনসহ ৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। প্ল্যান্টটিতে সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করার সময় বিস্ফোরণ হয় বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। ফায়ার সার্ভিস বলছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে।
নিহতরা হলেন- ভাটিয়ারীর জাহানারাবাদ কদমরসুল এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে শামছুল আলম (৫৬), বিএমএ গেট বানু বাজার এলাকার আবুল বাসার মিয়ার ছেলে ফরিদ (৩৬), নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার ছোট মনগড়া এলাকার মিকি রোঙ্গী লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫), নোয়াখালীর মাইজদী থানার অলিপুর এলাকার মৃত মকবুল আহমেদের ছেলে মো. আবদুল কাদের (৫৮), লক্ষীপুরের কমল নগর থানার মহিদুল হকের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩৩) ও অজ্ঞাত একজন। রবিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসিএইচ) আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির খবরে বলা হয়েছে।
গতকাল দুপুর ২টায় ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, 'দুর্ঘটনাস্থলে নতুন কোনো হতাহতের দেখা মেলেনি। বিস্ফোরণের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে সিলিন্ডার থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছি। মালিকপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।'
এর আগে রবিবার সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের একটি টিম।