রেলের একাধিক টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহযাত্রীর নাম বাধ্যতামূলক
টিকেট কালোবাজারি রোধে টিকিট ক্রয়ের সময় সহযাত্রীর নাম সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। 'টিকিট যার ভ্রমণ তার' নীতি বাস্তবায়নে যার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সহযাত্রীদের টিকিট কেনা হবে, সেখানে অবশ্যই অন্যদের নামও উল্লেখ করতে হবে।
শনিবার (১ এপ্রিল) সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটে রেলওয়ের টিকেট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সহজ ভিনসেন জেভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ২/৩/৪টি টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সিট সিলেক্ট করার পরের স্টেজে গিয়ে প্যাসেঞ্জার ১ এর ক্ষেত্রে যে অ্যাকাউন্ট দিয়ে সিলেক্ট করা হয়েছে, তার নাম বসানো আছে। প্যাসেঞ্জার ২/৩/৪ এর জায়গায় স্টার মার্ক করা একটি করে নামের জায়গা খালি রাখা হয়েছে। সেখানে নাম না লিখা পর্যন্ত 'প্রসিড' অপশনটি আসবে না। অর্থাৎ আপনি আপনার টিকিটগুলো কেনার কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন না।
ওই ফেসবুক পেজে ৯টা ১৩ মিনিটে দেওয়া আরেক পোস্টে বলা হয়েছে, অনলাইন রিফান্ড শুধুমাত্র ই-টিকিট ওয়েবসাইট এবং 'রেল সেবা' অ্যাপ থেকে কেনা টিকিটের জন্য প্রযোজ্য। আপনার ক্রয়ের হিস্ট্রিতে থাকা পছন্দমতো টিকিটের জন্য রিফান্ড বোতামে ক্লিক করলে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি পাঠানো হবে। সেই ওটিপি সাবমিট করা হলে টিকিট ফেরত প্রক্রিয়া শুরু হবে। রিফান্ডের টাকা কিছু দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে।
আরও বলা হয়, মনে রাখবেন একবার ওটিপি নিশ্চিতকরণ পাঠানো হলে, নির্বাচিত পিএনআর-এর জন্য বুক করা আসনগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। যাত্রা তারিখের আগে কাউন্টার থেকে আপনার অনলাইন টিকিট প্রিন্ট করা হলে, তা অনলাইন রিফান্ড সিস্টেম থেকে ফেরত পাওয়ার যোগ্য হবে না। এটি শুধুমাত্র স্টেশন কাউন্টার থেকে ফেরতের জন্য যোগ্য হবে।
সহজ ভিনসেন জেভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথ বলেন, রেলওয়ের চাহিদা অনুযায়ী টিকেটে সহযাত্রীর নাম এখন থেকে উল্লেখ থাকবে।
এনআইডি ও ছবি যুক্ত হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও রেলওয়ে এমন নির্দেশনা দেয়নি। রেলওয়ে বললে যুক্ত করা হবে।
এদিকে সহজ ভিনসেন জেভির ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, আগামী ৭ এপ্রিলের পর থেকে টিকিট কেনার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সহযাত্রীদের নাম (তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র/ ফটো আইডিতে দেওয়া) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভ্রমণের সময় সমস্ত যাত্রীদের অবশ্যই তাদের এনআইডি/ফটো আইডি সঙ্গে রাখতে হবে।
গত ২২ মার্চ রেল ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, একজন যাত্রী ঈদ অগ্রিম টিকিট ও ফেরত যাত্রার টিকিট উভয় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ একবার এবং প্রতিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট ক্রয় করতে পারবেন। একজন নিবন্ধন করা যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহযাত্রীদের এনআইডি অথবা জন্মনিবন্ধন নম্বর ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
তবে রেলের টিকিট কেনার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করে যাত্রীরা সহজেই পাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেই টিকিট। সঙ্গে এনআইডি কার্ড না থাকা বা নিবন্ধন না করা কিছু যাত্রী ভোগান্তিতে পড়লেও সবমিলিয়ে নতুন ব্যবস্থায় সহজেই টিকিট পাচ্ছেন- এমনই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন টিকিট পাওয়া যাত্রীরা।
এ বিষয়ে ট্রেনের টিকিট করতে আসা কয়েকজন সাধারণ যাত্রী বলেন, 'টিকিট যার, ভ্রমণ তার' - এমন পদ্ধতির ফলে টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমবে। তবে সেবার মান বাড়াতে সময়মতো ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করা দরকার।
কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করেননি এমন যাত্রীদের জন্য স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের কাছে স্থাপন করা হয়েছে হেল্প ডেস্ক। সেখানে সেবা দিচ্ছেন রেলওয়ের দু'জন কর্মচারী।
অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ময়মনসিংহ যাবেন হাবিবুর রহমান। ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য আগে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করেননি তিনি।
হাবিবুর রহমান বলেন, 'কাউন্টারে আগে তো এমনিতে টিকিট কাটা যেতো। এখন নাকি আগে রেজিস্ট্রেশন করা লাগে। এজন্য এনআইডি কার্ড নিয়ে এসেছি। প্রথম খুব ঝামেলার মনে হলেও পরে দেখি টিকিট পেতে আগের তুলনায় সময় কমই লেগেছে।'
রংপুরের যাত্রী মাহফজুর রহমান বলেন, 'আগে মানুষের ভিড় আর কালোবাজারিদের বড় একটা জটলা সব সময় মাথায় নিয়ে স্টেশনে আসতাম, এখন নতুন নিয়মে বাসা থেকে অনলাইনে টিকিট কাটায় সেই ঝামেলা আর পোহাতে হচ্ছে না। একদম সিটে গিয়ে বসতে পারছি।'