সেপ্টেম্বরে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে রেল চালু: মন্ত্রী
সড়ক অংশ যানবাহনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়ার ৯ মাস পরে সফলভাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে।
মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ৪২ কিলোমিটার যাত্রা শেষে সাত কোচের ট্রেনটি থামে মাওয়া রেল স্টেশনে।
ট্রেন থেকে নেমেই এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ ব্রিফিংয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার অংশে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবিধামত সময়ে এর উদ্বোধন করবেন।
আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলেও তিনি জানান।
ভাঙ্গা স্টেশনে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে ফিতা কেটে পরীক্ষামূলক যাত্রার উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী। অতিথিদের নিয়ে মন্ত্রী ট্রেনে চড়ার পর পরিচালক নূরুল ইসলাম সংকেত দিলে ১টা ২১ মিনিটে ট্রেনটি চলতে শুরু করে।
ঘণ্টায় গড়ে ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি পরিচালনা করেন লোকোমাস্টার রবিউল ইসলাম ও সহকারী লোকোমাস্টার আরিফুর রহমান। এক ঘণ্টা ৫৮ মিনিট যাত্রার পর ট্রেনটি মাওয়ায় থামে ৩টা ১৯ মিনিটে।
পরিচালক নূরুল ইসলাম জানান, প্রথম যাত্রায় ট্রেনটির সর্বেোচ্চ গতি ছিল ৩০ কিলোমিটার। পূর্ণাঙ্গ অপারেশনে এই লাইনে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন যাত্রায় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সহযাত্রী ছিলেন উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী লিটন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, আব্দুস সোবহান গোলাপ, ইকবাল হোসেন অপু, নাঈম রাজ্জাক,রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
২টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে ওঠে।
রেলমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার মধ্য দিয়ে এই সেতু পূর্ণাঙ্গতা পেল।
তিনি বলেন, 'আশা করা হচ্ছে, আগস্টের মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করবেন। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চলবে।'
১৭২ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে চীনের ঋণ সহায়তায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ২০১৬ সালে পদ্মা রেল লিংকের কাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত উন্নীত করা হয়।
একই সঙ্গে চার হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। এই লাইন নির্মাণ করা হলে কয়েকটি জেলা নতুন করে রেলওয়ের আওতায় আসবে। মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারিপুর ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে।
একই সঙ্গে ঢাকা-যশোর করিডোরে অপারেশনাল সুবিধাসমূহের উন্নয়ন এবং ২১২ কিলোমিটার কম দূরত্বের বিকল্প রেল যোগাযোগ সম্ভব হবে বলেও প্রকল্প দলিলে দাবি করা হয়েছে।
তাছাড়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপরুটে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরকে রেল লাইনের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টিতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে গতকাল ব্রিফিংয়ে আশা প্রকাশ করেন রেলমন্ত্রী। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির মতো কোন পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি বলেও তিনি জানান।
উৎসাহী জনতার ভিড়
ভাঙ্গা স্টেশনে স্থানীয় লোকজন হাত নেড়ে তাদের স্বপ্নের ট্রেনের প্রথম যাত্রীদের বিদায় জানান। পুরো যাত্রায় রেল লাইনের দুই পাশেই বিপুল সংখ্যক উৎসাহী জনতার উপস্থিতি দেখা গেছে।
স্কুলের শিক্ষার্থী, মাঠের কৃষক, সড়কের যাত্রীসহ সবাই আগ্রহের সঙ্গে দেখছিলেন ট্রেনটি। তাদের অনেকেই হাত নাড়ছিলেন। নন-এসি কোচগুলোর যাত্রীদের জানালা খুলে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দিতে দেখা গেছে।
ট্রেনের যাত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম মাতুব্বুর বলেন, ভাঙ্গা থেকে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়া যাবে এমনটা কোন দিন স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। কয়েক বছর আগেও ঢাকায় গেলে দুই দিন সময় হাতে রাখতে হত। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকায় গিয়ে সব কাজ করে আবার দিনের মধ্যেই ফরিদপুরে ফিরে আসা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর সড়ক অংশ যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নিচতলায় রেল অবকাঠামো স্থাপনে সেতুটি রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয় ১৭ জুলাই। একই বছরের ২০ আগস্ট রেলমন্ত্রী সেতু অংশে রেল স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করলেও কাজ শুরু হয় ২৩ নভেম্বর।