চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান করতে হবে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে: সুজন
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করতে হবে সাংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে, মন্তব্য সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন)।
মঙ্গলবার সুজন আয়োজিত, 'প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ' শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে নিজ বক্তব্যে সুজন সহ-সভাপতি এম এ মতিন বলেন, "বর্তমান সংকটটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দুই দিকেই। অনেক সংকটের মূলে আছে রাজনীতি, কিন্তু সমাধান করতে হবে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে।"
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সাংবিধানিক বিধিবিধান সত্ত্বেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো দলীয় সরকারের প্রভাব না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়।"
"২০১১ সালে আপিল বিভাগের এক সংক্ষিপ্ত বিভক্ত আদেশে ভবিষ্যতের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। তবে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি দেন।
"পরবর্তীতে আদালতের রায়ের একটি ভয়াবহ অপব্যখ্যা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির প্রস্তাব করে, গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটি পঞ্চদশ সংশোধনীর চূড়ান্ত সুপারিশ করে, যা সংসদে পাশ হয়," বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সংশোধনী পাশের ১৬ মাস পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে ভবিষ্যতের জন্য অসাংবিধানিক ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংসদ অনুমোদন করলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে উলে¬খ করা হয়।
তিনি বলেন, "আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক তথা গ্রহণযোগ্য করতে হলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলা আজ জরুরি।"
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, "মূল সংকটটা হলো রাজনৈতিক। অংশগ্রহণমূলক বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না তার সংকট। রাজনীতিকে এককেন্দ্রিক করার প্রবণতা।"
"যেভাবেই হোক পুনঃ পুনঃ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে। কার্যত অগণতান্ত্রিক দৃশ্যত গণতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে, যেখানে দল থাকবে কিন্তু গণতন্ত্র থাকবে না," বলেন তিনি।
চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, "প্রতিনিধিত্বমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায়। গণতন্ত্রের প্রয়োজনে, মানুষের স্বার্থে নির্দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচন দিলে তা সাংবিধানিক হবে।"
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড.এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধান দুটি দলের যে কোনো একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে দুটি দলই অংশগ্রহণ করে। আর এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।