চট্টগ্রামের প্রথম ‘মিক্সড ইউজ বিল্ডিং’ নির্মাণ করছে মেরিডিয়ান গ্রুপ
বহুতল ভবনের মাঝ বরাবর নির্মাণ করা হচ্ছে বিলাসবহুল ইনফিনিটি সুইমিংপুল। অর্থাৎ আপনি পানিতে নেমে সাঁতরে উন্মুক্ত স্থানে চলে যেতে পারবেন। স্বচ্ছ কাঁচের বাউন্ডারি আপনাকে শূন্যে ভাসার কিছুটা হলেও স্বাদ দিতে পারে। প্রায় আট তলা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের লাক্সারি তারকা হোটেল। থাকছে বিনোদনের ব্যবস্থা, শপিংমলও। অর্থাৎ এক ছাদের নিচে আবাসন, ডাইনিং, শপিং ও বিনোদনের ব্যবস্থা।
মিক্সড ইউজ বিল্ডিং অর্থাৎ একটি বহুতল ভবনে নাগরিক জীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা- একুশ শতকের বিয়েল এস্টেট খাতের একটি জনপ্রিয় ধারণা। প্রথমবারের মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এমন স্থাপনা নির্মাণ করছে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ মেরিডিয়ান।
'মেরিডিয়ান কোহিনুর সিটি' নামে নগরীর দামপাড়া ওয়াসা সড়কে প্রায় এক একর জমিতে ২৩ তলা বিশিষ্ট মিক্সড ইউজ বিল্ডিংটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের রিয়েল এস্টেট খাতে এমন নির্মাণ একেবারে নতুন। একটি ভবনে চার তারকা হোটেল, শপিংমল, ফুডকোর্ট, রেস্তোঁরা, সুবিশাল গেইমিং জোন, সিনেপ্লেক্স- বহুমাত্রিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবনটি এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যেন একজন পর্যটক বা বাসিন্দা আধুনিক নাগরিক জীবনের আমোদ-প্রমোদ, বিনোদনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। অর্থাৎ এটি শুধু শপিং মল নয়, এক্সপেরিয়েন্স মলও। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি সম্পন্নের পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
তিন দশকে নামী ব্র্যান্ড মেরিডিয়ানের ফুড, কনজ্যুমার পণ্য, অ্যাগ্রো, হোটেল-রেস্তোঁরা, সুপারশপ থাকলেও নতুন ব্যবসায়ের ধারণাটি (মিক্সড ইউজ বিল্ডিং) নিয়ে কাজ করছেন শিল্প গ্রুপটির দ্বিতীয় প্রজন্ম। প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশার ছোট ছেলে আকিব কামাল ভারত, যুক্তরাজ্য ও স্পেনে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে কোম্পানির ব্যবসার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন।
মেরিডিয়ান কোহিনুর সিটির পরিচালক (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) আকিব কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামে জমির দাম তুলনামূলক বেশি। এজন্য সাধারণত স্থাপনা নির্মাণের সময় বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় ঘিঞ্জি করা হয়। আমরা এদিক থেকে ভিন্ন চিন্তা করেছি। মানুষের চিত্তবিনোদনের বিষয়টিকে প্রধান্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্থাপত্যশৈলীতে ভবনটি নির্মাণ করছি। পুরো ভবনের মোট স্পেসের ৫২ শতাংশ কমন এবং বাকি ৪৮ শতাংশ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে।"
এই ধরণের উদ্যোগ বন্দরনগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, "চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক হাব করতে সরকার ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চেষ্টা করছেন। বন্দর ও শিল্পকেন্দ্রিক সুবিধার কারণে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। বিনিয়োগকারীসহ বিদেশি প্রফেশনালসরাও আসছেন। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এই খাতে মেরিডিয়ান কোহিনুর সিটি অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।"
যা রয়েছে
২৫০টিরও বেশি দোকানের জন্য আড়াই লাখ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে মেরিডিয়ান কোহিনুর সিটিতে। ভবনটির নিচ তলা থেকে প্রথম আট তলায় হচ্ছে শপিংমল। এরমধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ব্র্যান্ডশপের জন্য বিশাল বিশাল শোরুম করা হয়েছে। শপিংমলের প্রত্যেকটি ফ্লোর নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য নির্ধারিত থাকবে। প্রথম দুই তলা ব্র্যান্ডশপের জন্য, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা লেডিস ফ্যাশন, পঞ্চম তলা মেনস ফ্যাশন ও ফুটওয়্যার, ষষ্ঠ তলায় মোবাইল ও ইলেক্ট্রনিক্স, সপ্তম তলায় ফুটওয়্যার ও ফ্যাশন ব্র্যান্ড, অষ্টম তলায় ব্র্যান্ডশপ, নবম তলায় ফুডকোর্ট ও সিনেপ্লেক্স, দশম তলায় সিনেপ্লেক্স ও কিডস প্লে জোন, ১১ তলায় হোটেল লবি, রেস্তোঁরা কিচেন ও ওপেন স্পেস, ১২ তলায় অফিস স্পেস। ১৩-২১ তলায় থাকছে ১৮০টি কক্ষ নিয়ে চারতারকা হোটেল।
আধুনিক নকশা ও স্থাপত্যে নির্মিত ভবনটিতে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয়েছে। এটি ৮ দশমিক ৫ রিখটার স্কেলের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প সহনীয়। রয়েছে নারী-পুরষদের জন্য আলাদা প্রার্থনা কক্ষ, বসার স্থান, ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পট জোন, স্মোকিং জোনও।
ভবনটির নিচে তিনটি বেজমেন্টে দেড় শতাধিক গাড়ি ও অর্ধশতাধিক মোটরবাইক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
মেরিডিয়ান কোহিনুর সিটির অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ফুডকোর্ট। ইতোমধ্যে এটিরও বরাদ্দ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ব্যস্ত নগর জীবনে বিনোদনের বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্লকবাস্টার মুভির প্রদর্শনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে মাল্টিপল স্ক্রিনের সিনেপ্লেক্স। এছাড়াও প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুটের বৃহত্তর গেইমিং জোন করা হয়েছে।