পাহাড়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে ‘বৈসাবি’
পাহাড়ে আদিবাসীদের বর্ষবরণের প্রধান উৎসব 'বৈসাবি'র প্রথম দিন ছিল গতকাল। এ দিনে চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যারা পালন করে ফুল বিঝু। বুধবার সকালে বান্দরবানে শঙ্খ নদীতে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরকে বরণ ও সকলের মঙ্গল প্রার্থনা করেন চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণীরা। আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে তারা পালন করবেন মূল বিঝুর উৎসব।
পাড়ায় পাড়ায় চলছে তঞ্চঙ্গ্যাদের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা আর চাকমাদের ঘরে ঘরে আয়োজন করা হচ্ছে পাচনের (হরেক রকম মিশ্রিত সবজি রান্না)। বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন পাড়ার স্থানীয় লোকজন অংশ নেবে।
বৃহস্পতিবার থেকে মারমাদের চারদিন ব্যাপী বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সাংগ্রাই পোয়েও শুরু হচ্ছে। আর ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করবে বৈসু উৎসব।
ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই ও চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিঝু-কে একসাথে বলা হয় এই বৈসাবি উৎসব। এ উৎসবের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন এ অঞ্চলের মানুষ। পাহাড়ে ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আয়োজন করে থাকে নানা রকম কর্মসূচি। রঙ-বেরঙের পোষাকে শিশু-কিশোররা ঘুরে বেড়ায় এ-বাড়ি ও-বাড়ি।
বর্ষবরণ উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মারমাদের পানি উৎসব। এদিন পানি খেলার পাশাপাশি নাচে-গানে পরস্পরকে ভালবাসা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন তারা। ঠিক এইভাবে পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে মানুষ মেতে উঠে বৈসাবি উৎসবে।
নতুন বছরকে বরণ করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে প্রতিটি সম্প্রদায়। তবে ধর্মীয় ও সম্প্রদায় ভেদে বর্ষবরণ উৎসবকে একেক সম্প্রদায়ের মানুষ একেকভাবে উদযাপন করে থাকে।
সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা জানান, বর্ষবরণের উৎসব পালন করতে চার দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তারা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৩ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রা, বয়স্ক পূজা এবং পিঠা তৈরি উৎসব। শুক্রবার সাঙ্গু নদীর তীরে বুদ্ধ পূজা। শেষের দু'দিনে রয়েছে পানি খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বর্ষবরণ উৎসবকে 'চাংক্রান' নামে পালন করে থাকে ম্রো সম্প্রদায়রা। বেশ কয়েক বছর ধরে জাঁকজমকের সাথে এটি আয়োজন করা হয় ম্রো সম্প্রদায় অধ্যুষিত চিম্বুক এলাকায়। আশেপাশের বিভিন্ন পাড়া থেকে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে সেখানে। ম্রো ভাষার লেখক ইয়াঙান ম্রো বলেন, ১৪ এপ্রিল চিম্বুকে পোড়া বাংলা এলাকায় চাংক্রান উৎসব পালন করা হবে। সেখানে ম্রোদের হারানো গান, পালা গান তুলে ধরা হবে।
এছাড়া বর্মী পঞ্জিকা অনুসরণ করে ১৩ এপ্রিল থেকে উৎসব শুরু করে খিয়াং এবং চাক সম্প্রদায়ের মানুষ। তারাও ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলে ঘরদোর। পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন তারাও।