দুই বছরের লোকসান কাটিয়ে আবারও মুনাফায় ফিরলো বাটা
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডেড জুতা প্রস্তুতকারক বাটা শু কোম্পানি আবারও মুনাফায় ফিরেছে। টানা দুই বছর লোকসানের পর ২০২২ সালে মুনাফায় ফিরলো কোম্পানিটি।
যদিও টাকার মান কমে যাওয়ার (অবমূল্যায়ন) কারণে মুনাফার প্রবৃদ্ধি আটকে যাওয়ায় টার্গেটে পৌঁছাতে পারেনি বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাটা।
তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ বাটা শুর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় ২৯.৯৮ টাকায়। আগের দুই বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল যথাক্রমে ৫.০১ এবং ৯৬.৯৪ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিজেদের ওয়েবসাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাটা।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, ২০২০ ও ২০২১ সালের মতো কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ না থাকলেও ২০২২ সালে বাটা শু কোম্পানির পথ চলাটা মসৃণ ছিল না। কারণ গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে ডলার সংকটের সঙ্গে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে কোম্পানিটিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গুনতে হয়েছে লোকসান। আর এই কারণে কোম্পানিটি এখনও মুনাফার দিক দিয়ে কোভিড পূর্ববর্তী অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি।
২০২২ সালে শুধুমাত্র এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভাল ব্যবসা করেছে বাটা। এই সময়ে কোম্পানি ডাবল ডিজিট ইপিএস অর্জন করেছে, অন্য দুই প্রান্তিকে ইপিএস ছিল সিঙ্গেল ডিজিট।
বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ছয় দশকের মধ্যে ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো লোকসানের মুখে পড়ে বাট শু কোম্পানি। দেশব্যাপী করোনা লকডাউনের কারণে কোম্পানির বার্ষিক বিক্রি সে বছর ৪১ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
২০২১ সালের পরিস্থিতিও ছিল একই রকম। কোভিড-১৯ লকডাউনের কারণে সে বছরের দুই ঈদের কোনোটিতেই ব্যবসা করতে পারেনি বাটা। যদিও ঈদ উৎসবে ব্যবসার মাধ্যমেই বাটার বার্ষিক বিক্রির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি পূরণ হয়।
তবে ২০২২ সালে লকডাউন বা কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় ঈদ উৎসবে পূর্ণ ব্যবসা করেছে কোম্পানিটি। এতে রাজস্ব বেড়েছে বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানের। তবে বিজনেস কস্ট বেড়ে যাওয়ায় প্রফিট মার্জিন কমেছে।
অন্যদিকে, বাটার নিকটতম প্রতিযোগী অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের আয় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৮০০ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে কোম্পানির নিট মুনাফাও ৪২ শতাংশ বেড়ে ৬.৭৭ কোটি টাকা হয়েছে।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার জানিয়েছে, এক্সপোর্ট কালেকশনের ওপর টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স) সহ বেশিরভাগ ব্যয় বাড়ানোর পরেও তাদের রপ্তানি ও স্থানীয় বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ভাল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় নিট মুনাফা বেড়েছে।
এদিকে, বাটা শু বোর্ড ২০২২ সালে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের চূড়ান্ত হিসাবে ১০৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে। এর আগে প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে অন্তর্বর্তী হিসাবে ২৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল কোম্পানিটি।
এখন মোট নগদ লভ্যাংশ দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ শতাংশে; বাটা শুর ইতিহাসে এটিই হবে সর্বোচ্চ পেআউট।
এ বছরে বাংলাদেশের বাটা শেয়ারহোল্ডাররা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ হিসাবে ৩৬.৫০ টাকা নগদ পাচ্ছেন।
অর্থাৎ, কোম্পানি তার মোট লাভের ১৮ শতাংশের বেশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসাবে দিচ্ছে। অবশিষ্ট টাকা কোম্পানির রিটেইনড আর্নিং হিসেবে থাকবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানির রিটেইনড আর্নিং ছিল ৩৪৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানির শেয়ার দর বন্ধ হয় ৯৭৪.৮০ টাকায়। যদিও এ সময় শেয়ারের দাম ১.২৬ শতাংশ কমেছে।
বিগত বছরে, বাটা শুর সর্বোচ্চ শেয়ারের মূল্য ছিল ১,০৫৬ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৮৭১.৯০ টাকা।
১৯৬২ সাল থেকে বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা করছে বাটা; আর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাটা শু বাংলাদেশ নামে দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে কোম্পানিটি।
বিশ্বব্যাপী বাটা শু অর্গানাইজেশনের (বিএসও) অপারেটিং কোম্পানিগুলোর একটি হল বাটা শু। এটি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বাফিন বিভি-এর একটি সহযোগী সংস্থা, কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বাফিন বিভি। এছাড়া স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৯.৯৬ শতাংশ, বিদেশিদের কাছে ১.৩৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির ৮.৬৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।