তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের গড় তাপমাত্রাও প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে। এ বছর ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন রোগের উদ্ভব হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান যে রোগগুলো আছে সেগুলোর 'সিভিয়ারিটি' বাড়ছে। ফলে মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন তীব্র গরমে মানুষের হিট স্ট্রোক হচ্ছে। এর ফলে বাইরে যারা কাজ করে তারা ঠিকমত কাজ করতে পারছেনা। এর প্রভাব তার পরিবার, অর্থনীতির ওপর পড়ছে।
আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে আমরা গাছপালা রাখি নি। গাছপালা থাকলে প্রাকৃতিক একটা কুলিং সিস্টেম থাকে, শহরে সেই কুলিং সিস্টেমটা ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রামে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে স্বাস্থ্যে পার্থক্য তেমন নেই। কিন্তু শহরে মানুষের ভেরিয়েশন অনেক বেশি। এখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করা উচ্চবিত্ত যেমন আছে, তেমনি গৃহহীন দরিদ্র মানুষ আছে, বস্তিতে মানুষ আছে। ভেরিয়েশন বেশি থাকায় শহরে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে স্বাস্থ্যগত পার্থক্যটা বেশি। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার জন্য শহরের দরিদ্রদের সুযোগ কম। চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের পকেট থেকে খরচ দিতে হয়। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে শহরের মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ও চিকিৎসা খরচের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
তাপমাত্রা কমানোর ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু এর ফলে যে রোগগুলো বাড়ছে তা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে মানুষের শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি কমবে।
এখন হিট স্ট্রোক হচ্ছে, এটি প্রতিরোধে করণীয় কী তা ডাক্তাররা সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যদি একটা ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট থাকতো, যারা শুধু জরুরি অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে তারা সুশৃঙ্খলভাবে এসময় বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া, পদক্ষেপ নেয়া, প্রশিক্ষণের কাজ করতে পারতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি ইমার্জেন্সি ইউনিট থাকা দরকার সেটি কোভিড বা ডায়রিয়ার প্রকোপ বা ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু, হিটওয়েভ যেকোন ইমার্জেন্সিতে তদারকি করবে। এখন ইমার্জেন্সি বিষয়গুলো দেখভালের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি ইউনিট গড়ে তোলা প্রয়োজন।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক
(টিবিএসের সিনিয়র ফিচার লেখক সাদিকুর রহমান ফোনে অধ্যাপক ড.সৈয়দ আবদুল হামিদের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন)