হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল
আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রসারে আরও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় স্থাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও পুরোদমে কাজ চলমান থাকায় হাওরবাসীর স্বপ্নের হাসপাতালটি এখন দৃশ্যমান। এ পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন হাওর পাড়ের বাসিন্দা ও সচেতন মহল।
সুনামগঞ্জে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাজ আগামী বছর জুন নাগাদ শেষ হবে।
কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হলে এটি সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির পর সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। পরের শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় আরেকটি ব্যাচ। বর্তমানে এই দুই ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুর এলাকায় (দিরাই রাস্তা) ৩৫ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে হাসপাতালটি। বাংলাদেশের ৪৭তম সরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালে উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। মেডিকেল কলেজ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১,১০৮ কোটি টাকা।
মোট ২৯টি আধুনিক ভবনসহ সীমার ভেতরে থাকবে খেলার মাঠ ও পুকুর। এরই মধ্যে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ভবনটিতে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে।
নির্মাণ করা হচ্ছে নয়তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন; এ ভবনেই কলেজের একাডেমিক সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এছাড়া, নির্মিত হচ্ছে একটি আটতলা হোস্টেল ভবন, ছয়তলা ইন্টার্ন ডক্টরস ভবন, দশতলা সিঙ্গেল ডক্টরস একোমোডেশন ভবন, ছয়তলা স্টাফ নার্স ডরমেটরি ভবন এবং ছয়তলা স্টাফ ডরমেটরি ভবন।
এছাড়াও আরও নির্মিত হচ্ছে, অডিটোরিয়াম ভবন, নার্সিং কলেজের একাডেমিক ভবন, স্টুডেন্ট নার্স হোস্টেল ভবন, টিচিং মর্গ অ্যান্ড মরচুয়ারি ভবন, লন্ড্রি ভবন, মসজিদ ভবন ও আবাসিক ভবন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী (তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী) এম এ মান্নান এমপি হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুরোধ জানান। পরে একনেক সভায় এম এ মান্নানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
এরপর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরে একনেক চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ- নামে প্রায় ১,১০৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডাঃ শামসুদ্দিন আহমদ জানান, সংশ্লিষ্টরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছে নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য। পুরো কাজ সম্পন্ন হলেই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৪৫ ভাগ কাজ হয়েছে।
"একটি ভবনের কাজ সমাপ্ত হলেও অনেক ভবন এখনও নির্মাণাধীন রয়েছে। হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ। আগামী জুনে নতুন ভবনে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি," যোগ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জের অধ্যক্ষ মনোজিত মজুমদার বলেন, কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা চলছে। দ্বিতীয় ব্যাচের ক্লাস চলছে। নির্মাণাধীন সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাজ শেষ হলে জেলাবাসী ও শিক্ষার্থীরাও এতে উপকৃত হবে।
সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মমিনুল হক বলেন, "বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলায় ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত; আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে।"