জট কমাতে অফডক থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর ও মেট্রোপলিটন চেম্বার
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে যানজট মোকাবেলা, কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতিবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা এড়াতে বন্দরের পরিবর্তে বেসরকরি আইসিডি (অফডক) থেকে আমদানিকৃত এফসিএল কন্টেইনার ডেলিভারির নির্দেশনা চাইছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
গত ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) এর সভাপতি খলিলুর রহমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি কন্টেইনারসমূহ অফডকে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদানের জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার স্টোরেজ সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ। বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৩০ লাখ টিইইউ'র বেশি। এফসিএল কন্টেইনার এসব অফডকে স্থানান্তর করা হলে বন্দরের বর্তমান ফ্যাসিলিটি ব্যবহার করে আরও ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
তবে এমন প্রস্তাবনার বিরোধীতা করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি বলছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম অফডকে সরানো হলে খরচ বেড়ে যাবে ৪ গুণ। সংকটে পড়বে দেশের তৈরি পোশাক খাত।
এনবিআর চেয়ারম্যানকে সিএমসিসিআই এই চিঠি দেওয়ার একদিন পর, গত ১১ ডিসেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি চিঠি দেন বিজিএমইএ'র প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। ওই চিঠিতে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত পণ্য চালানবাহী কন্টেইনার বেসরকারি আইসিডি'তে না পাঠিয়ে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
যদিও ডিপো মালিকরা বলছেন, বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়ার ফলে বন্দরের প্রোডাক্টিভিটি (উৎপাদনশীলতা) কমছে। কন্টেইনার জটের কারণে আমদানি কন্টেইনার খালাসে সময় বেশি লাগছে। এতে জাহাজের স্টে টাইম বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে যে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে আমদানিকারকদের, এর দায় কে নেবে?
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ১৪ অক্টোবর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পৃথক দুটি চিঠি দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।
ওই চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দরের অপরেশনাল কার্যক্রম গতিশীল রাখতে সকল আমদানি করা এফসিএল কন্টেইনার অফডকে স্থানান্তর, সংরক্ষণ এবং অফডক হতে ডেলিভারির ব্যবস্থার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, 'বাংলাদেশে আমদানিকৃত কার্গোর মোট ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্য কোনো বন্দরে, বন্দর অভ্যন্তরে প্রতিদিন এত বিপুল পরিমাণে এফসিএল কন্টেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার নজির নেই। এতে প্রতিদিন ২,৫০০-৩,০০০ টিইইউএস কন্টেইনার বন্দর অভ্যন্তর হতে ডেলিভারি দেওয়ার কারণে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।'
'গড়ে ৪-৫ হাজার ট্রাক/কার্ভার্ড ভ্যানের সাথে ১০-১৫ হাজার জনবল বন্দরের সংরক্ষিত ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। এতে বন্দর অভ্যন্তরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে যানজট সৃষ্টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধীরগতি সৃষ্টিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়,' উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
এদিকে বিজিএমইএ চিঠিতে উল্লেখ করে, চট্টগ্রাম বন্দরের শতভাগ কন্টেইনারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কন্টেইনার হলো পোশাক খাতের। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাবনা পাঠানোর আগে পোশাক খাতসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয় বা আলোচনা করা হয়নি।
বন্দরের প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি, বিলম্বে পণ্য খালাস ও দীর্ঘ সূত্রিতার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দারুনভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি সক্ষমতা হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায় বিজিএমইএ। চিঠিতে আরও দাবি করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কন্টেইনারের ডেলিভারি চার্জ ৩,৩০০ টাকা— যা ডিপোতে ১২,৬০৫ টাকা। সুতরাং এতে খরচ বৃদ্ধি পাবে ৪ গুণের বেশি।
বিজিএমইএ'র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, "এমনিতেই রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হিমশিম খাচ্ছে অফডকগুলো। এর মধ্যে সব ধরনের আমদানি পণ্য অফডকে নেওয়া হলে খরচ বাড়ার পাশাপশি সীমাহীন জট লাগবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমরা কোনোভাবেই মানবো না।"
বেসরকারি ডিপোতে কন্টেইনার স্টোরেজ সক্ষমতা প্রায় ৮৫ হাজার টিইইউ। এরমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি থাকে খালি কন্টেইইনার। বন্দরের মোট আমদানির ১৭ শতাংশ কন্টেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয় অফডক থেকে। এছাড়া, প্রায় শতভাগ রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনারে পণ্য বোঝাই হয় অফডকে।
অফডক মালিক সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, এনবিআর যদি আমদানি কন্টেইনার বন্দর থেকে স্ক্যানিংয়ের পর বন্দর ইয়ার্ড, অফডক কিংবা আমদানিকারকের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে গিয়ে ডেলিভারি নেওয়ার সুযোগ করে দেয়— তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
"আমরাও চাইনা বিজিএমইএ'র কার্গো ডিপোতে নিয়ে আসতে। বন্দরের চেয়ে আইসিডিতে ৪ গুণ খরচ বেশি হওয়ার যে দাবি বিজিএমইএ করেছে, তা সঠিক নয়," যোগ করেন তিনি।