রাস্তায় গাড়ি পার্কিং, মানবসৃষ্ট কৃত্রিম জ্যামে নাকাল যাত্রীরা
অতীশ দীপঙ্কর মহাসড়কের শেষ প্রান্ত সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ের সরু রাস্তায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ঈগল পরিবহন ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের দুটি বাস। যাত্রী ওঠানো শেষে কোনো একটি বাস ছেড়ে গেলেই পেছনে অপেক্ষমান অন্য গণপরিবহন সামনে যেতে পারবে।
মিনিট পনেরো পর হানিফের বাসটি ছেড়ে গেলে একই জায়গায় এসে দাঁড়ায় একই কোম্পানির অপর একটি বাস। এরও ১০ মিনিট পরে ঈগলের বাসটি ছেড়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারে যানবাহন।
বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় সায়েদাবাদের একটি মোড় পাড়ি দিতেই লেগেছে প্রায় ২৫ মিনিট। এর প্রভাবে ধলপুর, মানিকনগর হয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই যানজট ছড়িয়ে পড়ে বাসাবো পর্যন্ত।
ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিনে রাজধানী কার্যত ফাঁকা দেখা গেলেও সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা গেছে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাসের টার্মিনালগুলোতে।
অতীশ দীপঙ্কর রোড হয়ে সায়েদাবাদ টার্মিনালে প্রবেশ করতে যাত্রীদের এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাড়তি সময় লেগেছে। গুলিস্তানে প্রবেশের পথে কাকরাইল থেকেই দেখা গেছে লম্বা যানজট।
এ কারণে গুলিস্তান থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বাসের যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েছেন, তেমনি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সদরঘাট হয়ে লঞ্চের ঈদ যাত্রীরাও। বাড়তি যানজটের কারণে অগ্রিম টিকেটের যাত্রীদের বাস ধরতে না পারার কথাও শোনা গেছে।
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশাপাশি মূল রাস্তার কোথাও এক সারি আবার দুই কোথাও দুই সারি করে বাস পার্কিং করে রাখা আছে।
ময়মনসিংহগামী সৌখিন, আলম এশিয়া, ইমাম, টাঙ্গাইলগামী বিনিময়, জামালপুরগামী রাজিব, কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা ও অনন্যা ক্ল্যাসিক পরিবহনের বাসগুলো ফেলে রাখার কারণে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জায়গা একেবারেই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
এ কারণে তিব্বত মোড় থেকে মহাখালী কাউন্টার পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগেছে।
রাজধানীর রামপুরা রোড অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটা ফাঁকা দেখা গেলেও রাস্তাটি ধরে বাসাবো ফ্লাইওভার পার হলেই দেখা গেছে তীব্র যানজট। এর কারণ অনুসন্ধানে কিছুদূর এগোলে দেখা যায় কমলাপুর রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে রাস্তার দুপাশেই দাঁড়িয়ে আছে বাসের সারি।
আরও সামনে এগোলে ধলপুর এলাকায় কিশোরগঞ্জগামী অনন্য সুপার ও যাতায়াত পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দেখা যায় দুই কোম্পানির ডজনখানেক বাস রাস্তায় পার্ক করে রাখা আছে।
রাস্তায় পার্কিংয়ের বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অবশ্য যাত্রীর অভাবে বাস ছেড়ে যেতে না পারায় রাস্তায় কিছু বাস দাঁড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। এ জন্যে তিনি মহাখালী টার্মিনালের সক্ষমতার অভাবকেও দায়ী করেন।
তিনি বলেন, মহাখালী টার্মিনালে ৪০০ বাস রাখার জায়গা থাকলেও এখান থেকে প্রতিদিন ৮০০ বাস চলে। ঈদের সময় সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে বাড়তি বাস রাস্তায় রাখতে হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, গণপরিবহনের চাহিদা মেটাতে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রিপের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছিল এন্ট্রি পয়েন্টে যেন কাউকে বাস পার্কিং করার অনুমতি দেওয়া না হয়। কিন্তু কিছু বাস তা মানছে না।