সিলেট সিটি নির্বাচন: প্রার্থী দেবে জাপা-ইসলামী আন্দোলন, জামায়াত-বামেদের ‘বর্জন’
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের মেয়র পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আর এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র, বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী আবারও প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইসলামী আন্দোলন তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে এবার নির্বাচন অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। বামদলগুলোও সিসিক নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও ২০১৮ সালে সিসিকের সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছিলো জামায়াত ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
জাপায় তিন প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলনে একক
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে জাপার কেউ প্রার্থী না হলেও এবার অন্তত ৩ জন নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা হলেন- মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আবদুস সামাদ। নগরে পোস্টার, তোরণ, বিলবোর্ডের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীতার জানান দিয়েছেন তারা। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের নিজেদের পক্ষে আনারও তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ তিন প্রার্থীর সমর্থনেই নগরে প্রচারণা চলছে।
ঈদের আগে নগরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল বলেছিলেন, "অতীতে সিলেট নগরের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে কাজ হয়েছে। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমেনি। নগরের উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমি প্রার্থী হতে আগ্রহী।"
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এই নগরের বাসিন্দা নন। তাছাড়া তিনি থাকেন যুক্তরাজ্যে। আর বিএনপি ও তাদের নেতা আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন বিষয়ে এখনো 'ঘোমটা' পড়ে আছেন। জনগণকে অনিশ্চয়তায় রেখেছেন। ভোটের সময় নাগরিকরা এসব বিবেচনায় নেবেন।
জাতীয় পার্টি এখনো চূড়ান্ত না করলেও প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসানকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে ধর্মভিত্তিক দলটি। ইতোমধ্যে প্রচারও শুরু করেছেন তিনি। গত সিসিক নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছিলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাদেও মনোনীত প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন সেবার ২ হাজার ১৯৫ ভোট পেয়েছিলেন।
ভোটে যাবে না জামায়াত
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়ত জোটের বিরোধ প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিলো। ২০১৮ সালের সিসিক নির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দিয়েছিলো বিএনপি ও জামায়াত। জামায়াতকে ছাড়াই সেবার মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর নানা ইস্যুতে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে অঘোষিতভাবে ভেঙেই গেছে বিএনপি-জামায়েতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
এবারের সিসিক নির্বাচনে জামায়াত আলাদা প্রার্থী দিবে কি-না এ নিয়ে আলোচনা ছিলো রাজনীতিক মহলে। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই জামায়াতের। ফলে গত নির্বাচনেও দলীয় সমর্থনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন জামায়াতের তৎকালীন সিলেট মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সেবার মাত্র ১১ হাজার ভোট পেয়ে এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তবে এবার নির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সিলেট মহানগর শাখার বর্তমান আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, "আমরা দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আছি। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। সিলেট সিটি নির্বাচন ইস্যুতে দলের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না। আমি সিটি নির্বাচনে যাচ্ছি না।"
ভোটে অনাগ্রহী বামদলগুলোও
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাম দলগুলোও। সরকারবিরোধী 'আন্দোলনের অংশ হিসেবে' ভোটে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু জাফর গত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে ৯০০ ভোট পান। তবে এবার সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে আবু জাফর বলেন, "এই নির্বাচন কমিশন বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন অসম্ভব। একারণে আমরা এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি।"
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায় জানান, "বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই আমাদের দল অংশ নেবে না।"
এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাম জোট সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, "বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই বলে বাম জোট এবং আমাদের দল মনে করে। এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তাই সিটি নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব না।"
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৩ মে। ২৫ মে মনোনয়নপত্র বাছাই আর প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন।
এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।