নির্বাচনের বিরোধিতায় ভোটের আগেই আন্দোলনে সরব হচ্ছে ইসলামী দলগুলো
সরকারের সাথে নামসর্বস্ব ৭টি ইসলামিক দল নির্বাচনে অংশ নিলেও বড় এবং ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকা ৫টি নিবন্ধিত ও ১০টিরও বেশি অনিবন্ধিত ইসলামী দল নির্বাচন ঠেকাতে রাজপথে সরব হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ১৩টি দল বিএনপির মতো বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্যও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে এই জোটের।
বিগত নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট অনুসারে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামী ও দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ঐক্যমতে পৌঁছেছে।
কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনের সাথে নির্বাচনের আগেই ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই দলগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে সরকার বিরোধী কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পতাকা র্যালি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) দলটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিলসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
শুক্রবারের সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি বলেছেন, "বেচাকেনার হাটের মতো প্রার্থী ও দলকে নির্বাচনে আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু খুব পেরেশানিতে আছেন, তাদের সিট কনফার্মেশন না পেয়ে।"
তিনি বলেন, "বিরোধী দলবিহীন প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী রুখে দেবে। সুতরাং অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায়, দেশের জনগণ যেভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে, তাতে সরকারের আখের রক্ষা হবে না।"
জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি প্রসঙ্গে মাদানি বলেন, "জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়েছে। জাতীয় পার্টি জাতির জন্য একটি বিষফোঁড়া। ২০১৪ সালে আবার ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করে বৈধতা দিয়েছে। ওরা অংশীদার, মন্ত্রী হয়, তারা বিরোধী দল হয় কীভাবে? এটা তো ধোঁকাবাজি। আর তৃণমূল বিএনপি আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক। টাকা ও সিট ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের নিয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরকারকে ফেরানোর জন্য ইসলামী আন্দোলন রাজপথে নেমেছে। সরকারকে বলবো ফিরে আসুন। আগামীতে যে রক্তপাত, গৃহযুদ্ধ হবে এর দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সরকারকে নিতে হবে।"
এছাড়া, মাওলানা মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশও সরকারের পদত্যাগ, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভ করে।
সূত্র জানায়, বিএনপির সাথে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সকল ইসলামিক দল নির্বাচনের আগে বিএনপির সাথে সরকার বিরোধী আন্দোলনে একই প্লাটফরমে জোটগত আন্দোলন করতে যাচ্ছে।
মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেমদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ২৯ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এদিকে, আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জেলায় জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে।
ভোটের হিসাবে কোন ইসলামী দলগুলো এগিয়ে?
বিগত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোটের মাঠে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সব থেকে এগিয়ে জামায়াতে ইসলামী।
আসন্ন নির্বাচনে সরকারের সাথে নির্বাচনে যাওয়া ৭টি ইসলামী দল হলো– বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।
নির্বাচনে না যাওয়া নিবন্ধিত ৫টি ইসলামী দল– বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ (রিকশা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিশ (দেওয়াল ঘড়ি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন), এবং জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম বাংলাদেশ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই এই দলগুলো সম্মিলিতভাবে এক শতাংশ ভোটও পায়নি। প্রায় সকল প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
তবে শুধুমাত্র তরিকত ফেডারেশন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে ২০১৪ সালে ২টি এবং ২০১৮ সালে ১টি আসনে জয় পায়।
প্রয়াত মুফতি আমিনির দল ইসলামী ঐক্য জোট ২০০১ সালে বিএনপির সাথে জোট করে ২টি আসন পায়।
মূলত নির্বাচনে যাওয়া ইসলামী দলগুলো নিজ প্রতীকে নির্বাচনে করে কোনো আসনে জয়ী হওয়ার কোনো নজির নেই।
অপরদিকে, বিএনপির সাথে সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলাম ১৯৯১ সালে এককভাবে নির্বাচন করে ১৮টি আসনে জয় পায়। মোট ভোটের ১২.১৩ শতাংশ ভোট পায়। দলটি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করে ৮.৬১ শতাংশ ভোট পায়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরাবরই এককভাবে নির্বাচন করে আসছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককভাবে ১৬০টি আসনে অংশ নিয়ে ০.৯৪ শতাংশ ভোট পায়। এছাড়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১.৫১ শতাংশ ভোট পায়।