১০ হাজার নতুন শয্যা পাচ্ছে দেশের ৮ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
জনস্বাস্থ্য পরিষেবার সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের প্রধান আটটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই এ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাদে অন্যান্য হাসপাতালে ন্যূনতম ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ নতুন শয্যা স্থাপন করা হবে।
এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে। এতে নতুন শয্যা স্থাপনের জন্য ভবন তৈরি ও সংস্কার করার পরিকল্পনা উল্লেখ থাকবে। শয্যা বাড়ানোর কাজ শুরু হবে আগামী অর্থবছরে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন শয্যার সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারও আধুনিয়কান করা হবে। বাড়ানো হবে আইসিইউ বেড।
প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে ২৪০০ শয্যা যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম এই হাসপাতালে ২৬০০ শয্যা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৮০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে সেবা নিচ্ছেন।
সারাদেশ থেকে রোগীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। শয্যার তুলনায় বাড়তি রোগীদের হাসপাতালের বারান্দাসহ বিভিন্ন খালি জায়গায় থাকতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, এতে রোগীদের বিভিন্ন রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি যেমন থাকে, তেমনি ব্যবস্থাপনা, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও কর্তৃপক্ষের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে। অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই অবস্থা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক টিবিএসকে বলেন, "আগে থেকেই শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেও এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করেছে।"
তিনি বলেন, "প্রত্যেকটি হাসপাতালেই শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ বা তার কাছাকাছি অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালগুলোতে নতুন শয্যা যুক্ত হলে রোগীদের দুর্ভোগ, সংক্রমণ ঝুঁকি কমবে। কাজের পরিবেশ উন্নত হবে। এতে রোগীদের পেছনে সরকারের ব্যয় কমবে।"
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে ১৫০০ শয্যা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান টিবিএসকে বলেন, হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত চাপ থাকায় হাসপাতালগুলোর বারান্দা, গ্যারেজের মত জায়গুলোতেও মাঝেমাঝে থাকতে হয় রোগীদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ৮০০ শয্যা রয়েছে। অথচ এই হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান টিবিএসকে জানান, তার হাসপাতালে নতুন করে ৫০০ শয্যা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য নতুন ভবন তৈরি করা হবে।
বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০০টি শয্যা নিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছে। কিন্তু গড়ে এক হাজারেরও বেশি রোগী নিয়মিত এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ইউনূস আলী জানিয়েছেন, তার হাসপাতালেও শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালে নতুন করে কত শয্যা যুক্ত হচ্ছে তা জানাতে চাননি তিনি।
অন্য একটি সুত্র জানিয়েছে, রংপুর মেডিকেলে নতুন করে ১০০০ শয্যা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
দেশে বর্তমানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ১৪ হাজার শয্যা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে শয্যার দেড় থেকে দুইগুণ অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও সারাদেশে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৫২ হাজার ৫৬০টি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের মানুষের মধ্যে চিকিৎসা নেওয়ার ইচ্ছা বেড়েছে। রোগ নির্ণয়ও সহজ হয়েছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়েনি।
বর্তমানে দেশের এক হাজার লোকের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে একটিরও কম করে শয্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি হাজার মানুষের বিপরীতে কমপক্ষে ৩.৫টি শয্যা থাকা উচিত।
বাংলাদেশে বর্তমানে মধ্য বয়সী জনসংখ্যা বেশি। ফলে আগামীতে বয়স্ক নাগরিকও বাড়বে। এতে ভবিষ্যতে হাসপাতালে সেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।