‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট করবে, বাড়াবে যানজট’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে তা হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট করবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ৪১টি খুঁটি হাতিরঝিল লেকে পড়বে। এতে লেকের সৌন্দর্য বিঘ্নিত হবে বলে দাবি করেছেন রাজউক প্রতিনিধিরা।
সোমবার (৮ মে) ঢাকা মহানগরীতে চলমান সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য গঠিত কমিটির প্রথম সভায় এ কথা বলেন তারা।
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হাতিরঝিল লেকটি স্বস্তির জন্য বর্তমানে নগরবাসীর পছন্দের শীর্ষে। রাজউক তাই লেকটি এড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিকল্প পথের পরিকল্পনার সুপারিশ করেছে।
২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারী ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পরিকল্পনার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে। একাধিক সংশোধনের পর, প্রকল্পটি সম্পন্নের সময়সীমা ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কি.মি. যার মধ্যে প্রধান অংশ ১৯.৭৩ কি.মি. এবং ৩১টি র্যাম্পের ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
এদিকে সভায় অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (ডিইই) সড়ক ও রেললাইন বরাবর ছড়িয়ে শহরের বাইরে যাবার কথা থাকলেও বর্তমানে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে র্যাম্প নামানো হচ্ছে, এতে শহরের উপর যানবাহনের চাপ আরো বৃদ্ধি পাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প এফডিসি সংলগ্ন রেল ক্রসিং হয়ে পান্থকুঞ্জ পার্কে নামানো হচ্ছে ও আরেকটি অংশ হাতিরপুল হয়ে পলাশীতে নামানো হচ্ছে। এতে একদিকে পার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পলাশী এলাকায় যানবাহনের চাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। কারণ তখন সকল যানবাহন পদ্মা সেতুতে যাবার জন্য পলাশী হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে চাইবে। তাছাড়া জলাধার, পার্ক ইত্যাদির উপর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ পরিহার করতে হবে মর্মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে।
তাই পান্থকুঞ্জ পার্কে যেকোন স্থাপনা নির্মাণ পরিহার করে বিকল্প ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে জানায় দক্ষিণ সিটি।
এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সংগৃহীত টোলের একটি অংশও দাবি করেছে যেহেতু এক্সপ্রেসওয়েটির অধিকাংশ স্থাপনা ডিএসসিসির সড়কের উপর দিয়ে যাবে।
আবার কাকলী ইন্টারসেকশনের নিকট র্যাম্প নামানো হলে সেখানেও যানজট বৃদ্ধি পাবে বলে উদ্ধেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
তাদের মতে, ঢাকা-ময়মনসিংহ প্রধান সড়ক সংলগ্ন কাকলী ইন্টারসেকশনের নিকট ডাউন র্যাম্প নামানো হলে ইন্টারসেকশনটিতে যানজট বৃদ্ধি পাবে। বিষয়টি সমাধানের জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে রেলওয়ে থেকেও ডিইই-এর কাজের কারণে ঢাকা হতে টঙ্গী পর্যন্ত রেলের ৩য় ও ৪র্থ রেললাইন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা হতে টঙ্গী পর্যন্ত ৩য় ও ৪র্থ রেললাইন নির্মাণের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। একই এলাইনমেন্ট বরাবর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই অংশে নির্মিতব্য প্রায় ৩৭.৮৪৭ কি:মি: রেললাইনের সাথে ডিইই এর প্রকল্প ওভারল্যাপ করেছে।
প্রকল্প সমন্বয় কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট ও র্যাম্পের অবস্থান নির্ধারণে উদ্ভূত জটিলতা নিরসন জরুরী।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব ডঃ মোঃ হুমায়ুন কবির, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ আনিছুর রহমান মিঞা উপস্থিত ছিলেন।