উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, আঘাত হানতে পারে রোববার
শনিবার (১৩ মে) দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে ভোর ৪ টার মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার যাত্রাপথ বাংলাদেশের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
তার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে।
পূর্বাভাসে তিনি বলেন, '১৪ মে (রোববার) সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং পুরো কক্সবাজার জেলার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।'
এই সময় বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫-২০০ কিমি হতে পারে বলে জানান তিনি।
আবহাওয়াবিদ আরও সতর্ক করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালী ও ভোলার চর এলাকা ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জোয়ারের হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আজ সকাল ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১২ কিলোমিটার। এই গতিবেগ আজ সারাদিন আরো বাড়বে বলে তার পূর্বাভাসে জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল পলাশ।
তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের চারপাশে সৃষ্টি হওয়া ঢেউয়ের উচ্চতা ৪৯ ফুট।
শনিবার সকাল ৬টায় প্রকাশিত আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় আজ (১৩ মে) রাত থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেখা দিতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মৌচাকের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
এদিকে, শুক্রবার (১২ মে) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর আগে, এ দিন বিকেলে এসব বন্দরের জন্য চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে মোংলা সমুদ্রবন্দরের জন্য এখনো ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি আছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০–১৬০ কিলোমিটার হতে পরে বলে জানান তিনি।