৩৫ ধরে ঘূর্ণিঝড়ের স্বেচ্ছাসেবী কাজে মফিজুর, ‘৯১ এর স্মৃতিচারণ
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজারের কলাতলীর মানুষকে বহু বুঝিয়েও আশ্রয়কেন্দ্রে আনা যায়নি। চোখের পলকে পানি বেড়ে যায়। শুরু হয় ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস। প্রাণহানি হয় অনেক।
কলাতলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমান স্মৃতিচারণ করছিলেন ১৯৯১ সালের সেই ঘূর্ণিঝড়ের। বলছিলেন সেসময়ের কঠিন পরিস্থিতির কথা।
বর্তমানে কক্সবাজারে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাইক্লোন প্রটেকশন প্রোগ্রামের (সিপিপি) টিম লিডারের দায়িত্ব পালন করছেন মফিজুর।
রবিবার (১৪ মে) সকাল ৯টার দিকে কলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ১৯৭২ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় জরুরী সেবা প্রদানে কাজ করে আসছে সিপিপি। ১৯৮৭ সালে এ স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হোন এই শিক্ষক।
শিক্ষক মফিজুর বলেন, "৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমার বয়স ছিল ২৩। তখন আমি তরুণ। কলাতলীর পশ্চিমে তখন গ্রাম ছিল। সেখানে অনেক মানুষ বসবাস করতেন। তখন এতো প্রশাসন, প্রচারণা বা সচেতনতা ছিল না। ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে চাইতেন না মানুষ। তখন মেগাফোন দিয়ে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে সরতে বলেছিলাম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে '৯১ এর ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। বিকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেছি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে। কিন্তু মানুষ শোনেননি। ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পর কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউবা পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। অনেকে নিরাপদে সরার সময়টুকুও পাননি।"
"ওই সময় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় আমি নিজেও সিগ্যালের ওইদিকে আটকা পড়েছিলাম। পরে পরমাণু শক্তি কমিশনের এদিকে চলে আসি। আমার বাসা ছিল দক্ষিণ কলাতলীতে। শুধুমাত্র জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে বসতঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলাম। গোলা ভরা ধান ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন সকালে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। খাওয়ার জন্যও কিছু ছিল না।"
'৯১ সালের মতো এখনও পরিবেশ গুমোট বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, "৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রথম দিকে বৃষ্টিপাত ছিল না। বাতাস ছিল না। পরিবেশ গুমোট ছিল। হঠাৎ করে মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে পানি বেড়ে যায়। তখন আর মানুষ সরতে পারেননি। এবারও একই রকম মনে হচ্ছে। গুমোট পরিবেশ। সাগরে তেমন ঢেউ নেই। বাতাসও কম।"
দীর্ঘ সময়ের কাজের সন্তুষ্টি কী?—জানতে চাইলে মফিজুর রহমান বলেন, "১৯৮৭ সালের দিকে আমার মুরব্বি ইউপি মেম্বার নাছিম সাহেব টিম লিডার ছিলেন। তিনি আমাকে এ কাজে যুক্ত করেন। মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। এটিই দিন শেষে সন্তুষ্টি। আমাদের কারণে অনেক মানুষের জানমাল রক্ষা পায়।"
উল্লেখ্য, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার (১৪ মে) বঙ্গোপসাগরে দুর্বল হয়ে পড়েছে; ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগের সে ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার (১৪ মে) দুপুর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফসহ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে।
তবে মোখা কক্সবাজারের দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিনে আঘাত হেনেছে। দুপুর দেড়টা থেকে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে, সেই সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। সেন্টমার্টিনের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজির হোছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য জানান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় মোট ৭০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে ৮৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ, ৯৯ হাজার ৬০৮ জন নারীসহ মোট দুই লাখ ৩৭৭ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ৪৫৬টি শিশুও রয়েছে। এছাড়াও ৪ হাজার ১৫৭টি গবাদিপশু নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে। জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে ৮৪টি মেডিকেল টিম।