অনিয়মিত ওষুধ সরবরাহের কারণে হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণের হার কমেছে
হাইপারটেনশনে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের ৫৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ বছর ধরে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ায় ৬ মাস আগেও এসব উপজেলার ৬০% রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে বর্তমানে ওষুধ সরবরাহ সমস্যার কারণে এই রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার ৫৪%-এ নেমে এসেছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ যৌথভাবে ২০১৮ সাল থেকে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তায় 'হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রাম' শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. শামীম জুবায়ের বলেন, "দেশের ৫৪টি উপজেলায় ১ লাখ ৫১ হাজার রেজিস্টার্ড রোগী নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নেয়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা দেখেছি ওষুধ খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা রোগীরা যদি নিয়মিত ওষুধ না পায় তাহলে আবার তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।"
তবে বর্তমানে রোগী পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, এসেনসিয়াল ড্রাগসের ওষুধ বিপণন ও সরবরাহের বিলম্বের কারণে রোগীরা নিয়মিত ওষুধ পাচ্ছে না।
ডা. শামীম জুবায়ের বলেন, "ইডিসিএলের (এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড) ওষুধ বিতরণ ও বিপণন প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে গত কয়েক মাসে প্রত্যেক উপজেলায় নিয়মমত ওষুধ পৌঁছায় নি। ইডিসিএলের সমস্যা হলো একটি বিভাগে ওষুধ পাঠালে যে পর্যন্ত সব উপজেলা থেকে চাহিদা না আসে ততোক্ষণ ওষুধ পাঠায় না। কিন্তু একেক উপজেলায় রোগীর পরিমাণ একেক রকম, চাহিদাও একেক রকম। ইডিসিএলের বিপণন এবং বিতরণে সমন্বয় করতে হবে।"
তিনি আরো বলেন, "উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সঠিকভাবে রেজিস্টার্ড রোগীদের ওষুধ সরবরাহ করতে না পারার কারণে রোগের নিয়ন্ত্রণ হার কমে এসেছে। অনেক রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়েছে। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে অনেকেই নিয়মিত ওষুধ কিনে খেতে পারেনি।"
আজ ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য 'সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন'।
এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর বিএমএ ভবনে অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সমন্বয়ে আয়োজিত 'বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি ও করণীয়' শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, "এখন ওষুধের চাহিদা অনেক বেশি। আগে তো চাহিদা জানা ছিলনা। আমরা চাহিদা তৈরী করেছি। তবে হাইপারটেনশনের ওষুধে বিরতি দিলে সমস্যা। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য যাতে বিরতি না হয় সেটি নিশ্চিত করা। কিন্তু তারপরও বিরতি পড়ে যাচ্ছে। অপারেশনাল প্ল্যান পাশ হতে তিন থেকে চার মাস লেগে যায়, তখন ওষুধ সরবরাহে সমস্যা হয়। এছাড়া ইডিসিএলের গাড়ি মাত্র ৬টা। সব জায়গায় পৌঁছাতে সময় লাগে।"
তিনি আরো বলেন, "অপারেশনাল প্ল্যান থেকে ওষুধ কিনে কিনে এ কর্মসূচি চালানো কঠিন। কোন না কোন একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। রাজস্ব খাত থেকে সাপ্লাই আসে কিনা সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি আমরা।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০২২ সালে দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যই হয়েছে অসংক্রামক রোগের জন্য। এর মধ্যে ৩০% কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য দায়ী। হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো হাইপারটেনশন, যা উচ্চ রক্তচাপ নামেও পরিচিত। এর সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না কিন্তু যদি যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এই রোগ হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর এবং অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক কেননা প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ৫ জনে ১ জন এই রোগে ভুগছেন। সবার জন্য উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা সহজলভ্য করতে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে এর ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার এবং এ কর্মসূচিতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহবান জানান তারা।