সিলেট সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা সত্ত্বেও প্রার্থী হলেন জামায়াতের ৬ নেতা
বিএনপির মতো বর্তমান সরকারে অধীনে সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামী। সিলেট সিটির গত নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়ত নিজেদের প্রার্থী দিলেও, এবার তাদের কোন প্রার্থী নেই। তবে কাউন্সিলর পদে ঠিকই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলটির কয়েকজন নেতা। ফলে বর্জনের ঘোষণা দিয়েও ভোটে থাকছে।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগে থেকেই এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। দলের নির্দেশনা মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বিএনপির কেউ যাতে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী না হন, সে লক্ষ্যে নানামুখী তৎপরতা চালায় দলটি। কেন্দ্র থেকেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের চাপ দেয়া হয়। তবু দলীয় নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারেনি বিএনপি। দলটির অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপি-দলীয় বর্তমান ৭ কাউন্সিলরের মধ্যে ৬ জনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বিএনপির মতোন তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীও এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তবু দলটির অন্তত ৬ জন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বর্তমান ও একজন সাবেক কাউন্সিলর রয়েছেন।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, দলটির নেতাদের মধ্যে ২৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সুহেল আহমদ রিপন ও ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল জলির নজরুল এবারও প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া জামায়াত নেতাদের মধ্যে ১০নং ওয়ার্ডে আব্দুল হাকিম, ২৮নং ওয়ার্ডে সুহেল রানা, ৩৩নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম ও ৪১ নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।
দলীয় নেতাদের প্রার্থী হওয়ার কথা তথ্য নিশ্চিত করে জামায়াতের সিলেট মহানগর শাখার আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বুধবার (২৪ মে) বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই গত সিটি নির্বাচনে আমরা আলাদা প্রার্থী দিলেও, এবার দেইনি।
তিনি বলেন, 'কাউন্সিলর নির্বাচনকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। দলীয় পরিচয়ে কেউ কাউন্সিলর প্রার্থী হন না। স্থানীয় বিষয় এতে জড়িত থাকে। স্থানীয়দের চাপে ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার কারণেই জামায়াতের অনেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এর সাথে জামায়েতের কোন সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দল কোন কঠোর সিদ্ধান্তও নেবে না। তাছাড়া প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিরা দলের কোন দায়িত্বশীল পদেও নেই'।
জামায়াতের আমীর প্রার্থী হওয়ার সাথে দলের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া দলের সব নেতাদের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচলানা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে জামায়াতের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। স্থানীয় কমিটিগুলোর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন মহানগর শাখার নেতারা।
বর্জনের ঘোষণা দিয়েও প্রার্থীদের পক্ষে দলের কমিটি গঠন প্রসঙ্গে মহানগর শাখার আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, 'দল থেকে কোন কমিটি করা হয়নি। প্রার্থীরাই কমিটি গঠন করেছেন। এতে দলের অনেকে থাকতে পারেন। তবে দলীয় পরিচয়ে নয়, স্থানীয় ভোটার ও প্রার্থীর আপনজন হিসেবেই তারা এসব কমিটিতে রয়েছেন'।
২৪ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রাথৃী হয়েছেন জামায়াত নেতা সুহেল আহমদ রিপন। তিনি এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরও। রিপন বলেন, 'এলাকাবাসীর চাপেই আমি প্রার্থী হয়েছি। দলীয় পরিচয় নয়, এলাকার সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রার্থী হয়েছি। সব দলের মানুষজনই আমার সাথে আছেন'।
প্রসঙ্গত,২০১৮ সালের সিসিক নির্বাচনে দলের মহানগর শাখার তৎকালীন আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছিল জামায়াত। জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছাড়াই সেবার মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট সিটি নির্বাচনকে ঘিরেই বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরপর নানা ইস্যুতে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে সিলেটে অঘোষিতভাবে ভেঙেই গেছে বিএনপি-জামায়েতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফুল হক যেখানে প্রায় এক লাখ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, সেখানে মাত্র ১১ হাজার ভোট পাওয়ায় জামায়েতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
২০ মে সমাবেশ করে এবার প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক। এর আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান নগরের ৪নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তবে লোদী ছাড়া বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের কেউই নির্বাচন থেকে সরে আসেননি। বর্তমান কাউন্সিলরদের ৬ জনই প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আর ২১ জুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।