রিসাইকেল পোশাকের ব্যাকওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রির ওপর ভ্যাট মওকুফের সম্ভাবনা
রিসাইকেল ফাইবার থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে আগামী অর্থবছরে স্পিনিং মিলকর্তৃক টেক্সটাইল ওয়েস্ট (তুলা ও ঝুট) সংগ্রহের ওপর বিদ্যমান ৭.৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের কথা চিন্তা করছে সরকার।
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সার্কুলার ফ্যাশন ধারণাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে, যা মূলত রিসাইকেল ফাইবার থেকেই তৈরি হয়।
এ ধরনের ওয়েস্টের ওপর ভ্যাটসহ অন্যান্য কর বাতিলের জন্য পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনস (বিজিএমইএ)- এর পক্ষ থেকে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউকে (এনবিআর) অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
বর্তমানে দেশে এ ধরনের ওয়েস্টের বাজার প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের।
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "রিসাইকেল ফাইবার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে ইয়ার্ন ও ফেব্রিকের জন্য ব্যয় হওয়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতে পারে।"
এছাড়া, ম্যান মেইড ফাইবারে তৈরি ফেব্রিকের ওয়েস্ট উৎপাদন পর্যায়েও ভ্যাট অব্যাহতি পেতে যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটে পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে রিসাইকল ইন্ডাস্ট্রিকে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে ফাইন্যান্স বিলের মাধ্যমে এ ধরনের প্রস্তাব দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশে কটন আমদানিতেও দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশে পোশাকের ৭৫ শতাংশই তৈরি হয় কটন থেকে।
গ্লোবাল ফ্যাশন এজেন্ডা-এর নেতৃত্বে ক্রস-সেক্টরিয়াল প্রোজেক্ট 'সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ' পরিচালিত এক গবেষণা অনুসারে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও ফেব্রিক মিলগুলো থেকে প্রায় ৫,৭৭,০০০ টন ওয়েস্ট বা বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে, যার মধ্যে ২,৫০,০০ টন বা প্রায় অর্ধেকই ছিল শতভাগ কটন।
সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপের গবেষণার ফল অনুযায়ী, যদি দেশের কটন ওয়েস্টের শতভাগ রিসাইকেল করা যায়, তহলে আমদানির পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমানে ওয়েস্ট কটন ও ফেব্রিক ওয়েস্ট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। একই হারে ভ্যাট রয়েছে ম্যান মেইড ফাইবারের ফেব্রিক ওয়েস্টের উপরেও।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, রিসাইকেলড ফাইবার উৎপাদনের লক্ষ্যে দেশে ইতোমধ্যে কয়েকটি বড় কোম্পানি বিনিয়োগে এসেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেক্সিমকো লিমিটেড, ডিবিএল গ্রুপসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
ডিবিএল গ্রুপ দুই বছর আগে রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদন শুরু করে।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম ফিরোজ টিবিএসকে বলেন, "সারাবিশ্ব এখন রিসাইকেল পোশাক উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে সরকারের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হলে তা শিল্প স্থাপনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"
যেসব শিল্প ইতোমধ্যে সক্ষমতা অর্জন করেছে, এমন শিল্পের ট্যাক্স সুবিধা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, যেসব নতুন খাতের শিল্প গড়ে উঠতে যাচ্ছে কিংবা সম্ভাবনা রয়েছে– এমন শিল্পকে ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বেশকিছু স্থানীয় শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা চলতি বছর শেষ হওয়ার কথা। এরমধ্যে ব্লেন্ডার, জুসার, প্রশার কুকারসহ কিছু হোম অ্যাপ্লায়েন্সের অব্যাহতি সুবিধা আরো দুই বছর বাড়ানো হতে পারে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেক্ট্রিভ ওভেনও একই সুবিধা পেতে পারে।
আইসিটি ও কম্পিউটার তিন বছরের জন্য এ সুবিধা পেতে যাচ্ছে। হ্যান্ড মেইড বিস্কুট উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সীমা ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা এবং কেকের ক্ষেত্রে এই সীমা ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। ফলে এসব উৎপাদনকারীরা কিছুটা সুবিধা পাবেন।
পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হওয়া কোকোনাট কোপরা ওয়েস্ট উৎপাদনেও ভ্যাট অব্যাহতি আসতে পারে। এছাড়া, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা নিরোধক ওষুধ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আসতে পারে।
এছাড়া কৃষি কাজে ব্যবহার হওয়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ড্রায়ার, স্প্রেয়ার মেশিন, পটেটো প্লান্টার ইত্যাদি আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার হতে পারে। এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন, টারবো ইঞ্জিনসহ এয়ারক্রাফটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, সব ধরনের কন্টেইনার, সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে শোধনের জন্য সোলার চালিত ওয়াটার ডিস্টিলেশন প্ল্যান্ট আমদানিতেও অগ্রিম কর প্রত্যাহার হতে পারে।
স্থানীয় লিফট ও এস্কেলেটর শিল্পকে আরও উৎসাহিত করতে তাদেরকে সুরক্ষার অংশ হিসেবে লিফট আমদানিতে শুল্ক বিদ্যমান ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। অবশ্য এতে মোটাদাগে সুবিধা পাবে দুই-তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমদানিনির্ভর হওয়ায় কনস্ট্রাকশন ব্যয় বাড়তে পারে।
স্থানীয় কাজুবাদাম উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা দিতে আমদানিতে টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্স (টিটিআেই) বিদ্যমান ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হতে পারে।
ইলেকট্রিক সুইস ও সকেট উৎপাদনকারী শিল্পের রিডিউসড রেটে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে, স্থানীয় বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দিতে কিছু পিএইচপি, এসপিসি, পিসি পাইল এবং এসপিসি পোলের রিডিউসড রেটে আমদানির সুযোগ বাতিল করা হতে পারে।
স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে। একইভাবে ইলেক্ট্রিক প্যানেল আমদানিতেও বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ হতে পারে।
এছাড়া পলিয়েস্টার ফাইবার উৎপাদন ও অ্যান্টিফ্রিজ ফর্মুলেশনে ব্যবহৃত কাঁচামাল ইথিলিন গ্লাইকোলের ওপর আমদানি ভ্যাট প্রত্যাহার করতে পারে সরকার। এই তালিকায় টেরেফথালিক অ্যাসিড এবং হট-রোল্ড স্টেইনলেস স্টিলও রয়েছে।