গুম, হত্যা ও নিপীড়নে ‘জড়িত’ ৫০০ পুলিশ কর্মকর্তার তালিকা করেছে বিএনপি
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন, নিপীড়ন, গায়েবি মামলার সাথে জড়িত ও কর্মসূচিতে বাধা দানকারী ৫০০ পুলিশ কর্মকর্তার তালিকা করেছে বিএনপি। সারাদেশের স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের দেয়া তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে জেলা কমিটির পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী যাচাই-বাচাইয়ের পর তালিকা করা হয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, এ তালিকায় মধ্যে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি ক্যাটাগরিতে আছেন মোট ৫৫ জন। তালিকার একটি কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে পৌঁছায়।
তালিকায় মোট ৫০০ জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে যারা ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় ও তার আগে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বরত ছিলেন বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র।
ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপিসহ মোট ৫৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, সিলেট বিভাগে ৪, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪, রংপুর বিভাগে ৮, রাজশাহী বিভাগে ৮ ও খুলনা বিভাগে ৭ জন পুলিশ অফিসারের নাম রয়েছে। এসব কর্মকর্তারা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালনকারী করেছিলেন। যারা সবাই এখন পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের বিভিন্ন বড় পদে কর্মরত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, 'তথ্য সংগ্রহ কমিটি'র সাথে সংশ্লিষ্ট এক বিএনপি নেতা জানান, "এসব কর্মকর্তারা গুম, খুন, হামলা, মামলার সাথে জড়িত, যার যথাযথ প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, এবং সেই অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাচাই করার পরেই এ তালিকা করা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এসব কর্মকর্তারা তাদের কৃতকর্মের মাধ্যমে সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ সংঘঠিত করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে- দেশের প্রচলিত আইনসহ পৃথিবীর সকল আইনেই তারা দোষী। যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে, তারা সবাই কমবেশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, "এসব প্রমাণ ও নথি প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করবে দলটি। তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক মহলেও তুলে ধরা হবে।"
গত ২৩ মে ১৪ সদস্যের একটি 'তথ্য সংগ্রহ কমিটি' গঠন করে বিএনপি। এই কমিটি গায়েবি ও মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, সহিংস আক্রমণ, অগ্নিসংযোগসহ কর্মসূচিতে বাধা প্রদানকারী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ওই 'কর্মকাণ্ডে' জড়িত তাদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে গত মাসের শেষ দিকে বিএনপির সব জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে চিঠি দেয় বিএনপি। এরই মধ্যে অধিকাংশ জেলার নেতারা তাদের রিপোর্ট কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন।
তথ্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান বলেন, ''সারাদেশ থেকে এসব তথ্য হাতে পেয়েছি, প্রায় জেলা থেকেই তথ্য পেয়েছি। তবে আমরা কোন ব্যক্তি বা কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করবো না এখন।"
এদিকে মন্তব্যের জন্য টিবিএস পুলিশ সদর দপ্তরে পৌঁছালে পুলিশের একজন কর্মকর্তা তালিকাটি দেখতে চান। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মো. মনজুর হোসেন বলেন, "আপনার কাছে তালিকাটি থেকে থাকলে আমাদেরও তার একটি কপি পাঠান। এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে পারি।"
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারাদেশে দলটির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা ও ৬০০ জনকে গুম করেছে সরকার। নেতা-কর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছে, তার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামী ৩৬ লাখ। এখনও কারাগারে আটক ২০ হাজার।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থায় জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে, সেই ব্যক্তিকে ভিসা দেবে না ওয়াশিংটন। এই নীতির আওতায় থাকবেন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও এর আওতাভুক্ত হবেন।
এছাড়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রকাশে বাধা দিলেও ভিসা পাবে না জড়িত ব্যক্তি।