বগুড়ায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে বাস
বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলাম স্ত্রীসহ ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বগুড়ার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিলেন। বগুড়ায় পৌঁছেছেন ভোর ৫টায়। সাধারণত ঢাকা থেকে বগুড়ায় বাস পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। এই হিসেবে রাকিবুল আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে বিভিন্ন জায়গায় জ্যামে আটকে ছিলেন।
রাকিবুল জানান, ঈদের সময় বলে বাস ছাড়তেও দেরি হয়েছে ২০ মিনিট। এর মধ্যে কল্যাণপুর থেকে সাভার পার হতেই দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। গাজীপুরের চন্দ্রা, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, অর্থাৎ যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্ত আর সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়ার প্রবেশমুখেও জানজট ছিল। এই কারণে নির্ধারিত সময়ে বাস পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া কিংবা উত্তরবঙ্গ অভিমুখে আসা বাসগুলোর রাস্তায় জ্যামের কারণে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। বগুড়া থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোও নির্ধারিত শিডিউলের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা দেরি করে ছাড়ছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত) এ সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হয়েছে ৪২ হাজার ৫৬০টি যানবাহন। এ থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ তিন কোটি ২৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৫০ টাকা টোল আদায় করেছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে সড়কে এখন অনেকগুণ বেশি যান চলাচল করছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে অর্থাৎ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এলাকা পার হয়ে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচলের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন ঢাকা থেকে বগুড়া আসা রাহওয়ার আশওয়াত ওরফে ফাহিম। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছেন তিনি।
ফাহিম বলেন, রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়া, রাস্তার কাজসহ আরও অনেক কারণে মহাসড়কে কিছু কিছু জায়গায় যানজট তৈরি হয়েছে। এতে ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ৬ ঘণ্টার রাস্তা আসতে ৮ ঘণ্টা লেগেছে। তবে বগুড়া অঞ্চলে কোনো এলাকায় উল্লেখযোগ্য যানজট নেই।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে বগুড়া ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি আসছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার মো. মুক্তার হোসেন। বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে তিনি গাজীপুরে ছিলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মুক্তার জানান, ভৈরব থেকে গাজীপুরে আসতে কোনো যানজট পাননি। গাজীপুরের মধ্যে আপাতত কোনো যানজট নেই। শুনেছি এলেঙ্গা এলাকায় গাড়ি থেমে থেমে চলছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে মোট ১৭ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে পৌঁছাতে পেরেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজীব। তিনি জানান, মহাখালী থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পার হতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতুর দুপারে কিছুটা জ্যাম ছিল। রাস্তার চার লেনের কাজের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। সব মিলে স্বাভাবিক সময়ে কুড়িগ্রাম পৌঁছাতে সময় লাগে ১৩ থেরেক ১৪ ঘণ্টা। কিন্তু এবার লেগেছে ১৭ ঘণ্টা।
রাস্তায় এভাবে খণ্ড খণ্ড যানজটের কারণে বগুড়া থেকে ঢাকাগামী বাসের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। বগুড়া থেকে ঢাকাগামী কিছু কিছু বাস ছাড়তে তিন থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে।
বগুড়ার এসআর বাস কাউন্টারের ম্যানেজার মো. আরেফিন বলেন, মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর দুইপার, গাজীপুরের চন্দ্রায় যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এই জ্যামগুলো সাধারণত তৈরি হয় পশুবাহী গাড়ির ব্যাপক চাপের কারণে। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবারও পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন খুব দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।