চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচন: মাইকে আহ্বান জানিয়েও মিলছে না ভোটার
'সম্মানিত এলাকাবাসী, আপনাদের মূল্যবান ভোটটি কেন্দ্রে গিয়ে দিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।'
রবিবার (৩০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানার বাদুরতলা জঙ্গি শাহ মাজার মসজিদের মাইক থেকে ভোটারদের প্রতি এভাবেই আহ্বান জানানো হয়। মসজিদ থেকে পাশ্ববর্তী ভোট কেন্দ্র রেঁনেসা স্কুল এন্ড কলেজের দুরত্ব আধ কিলোমিটারেরও কম। কিন্তু মসজিদ থেকে জানানো এ আহবান সত্ত্বেও দুপুর দুইটা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট দেন মাত্র ১০৬ জন ভোটার।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, 'কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩৭০৫ জন। কিন্তু উপস্থিতি খুবই কম। সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভোট দেন ১৭ জন। এরপর মাইকে ভোট দিতে আহবান জানানো হয়। এখন বেলা ২ টা পর্যন্ত ১০৬ জন ভোট দিয়েছে। কেন্দ্রের ভেতর যারা ভিড় করছিলেন, তাদের বলেছি ভিড় না করে ভোটার নিয়ে আসতে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জঙ্গি শাহ মাজার মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'মসজিদ কমিটি থেকে বলার কারণে গতকাল ও আজ মসজিদের মাইকে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম।'
শুধু রেঁনেসা স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র নয়, নগরের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিলো অপেক্ষাকৃত কম। এছাড়া নির্বাচনে ছয় প্রার্থী অংশ নিলেও কেন্দ্রগুলোতে নৌকার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না।
দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬ নম্বর কেন্দ্রে ভোট দেন ২৪৭ জন। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩১৬৬ জন। একই ভাবে নাসিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট দেন ২৯৯ জন। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২৬৮৯।
এদিকে বেলা ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিভাগীয় কার্যালয় ভোট কেন্দ্রে যান চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনের উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন। ভবনের নীচ তলায় একটি বুথে ইভিএম মেশিনে তখন ভোট পড়েছে মাত্র ৯টি। ভোটের এমন চিত্র দেখে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন তিনি।
সঙ্গে থাকা স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে ভোটের সংখ্যা এত কম কেন জানতে চান তিনি। এ সময় কেন্দ্রটির পাশাপাশি যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইমাম প্রশিক্ষণ ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তিনি। এই দু'টিতে গিয়েও হতাশ হন প্রার্থী।
নগরের ডবলমুরিং থানার ৫১ নম্বর ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পিসাইডিং অফিসার আশরাফুল আলম জানান, দুপুর ২টা পর্যন্ত তার কেন্দ্রে ৬.০৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
পার্শ্ববর্তী ৫৩ নম্বর যুব উন্নয়ণ অধিদপ্তর কেন্দ্রে ৫.৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান কেন্দ্রের পিসাইডিং অফিসার গোলাম শাহ জাহান। এসময় ফাঁকা ভোট কেন্দ্রে এক পুলিশ সদস্যকে ঘুমাতে দেখা যায়।
এই উপনির্বাচনে নারীদের তুলনায় পুরুষ ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি। মনসুরাবাদ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বসেছে মোট ছয়টি বুথ। ১৮ নম্বর কেন্দ্রে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৯৯ টি, যেখানে ভোটার সংখ্যা ২৬৮৯ জন।
এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন মোহাম্মদ জসিম ও শাহনাজ দম্পতি। দুজনই ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, 'ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। কোনো ঝামেলা নেই।'
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ স্কুল ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪৬৫০ জন। ১২টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে মোট ভোট পড়ে মাত্র ৪.৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে মোট ৩ টি ভোট কেন্দ্র। লাইব্রেরি ভবন কেন্দ্রে ভোটার ২৮৭৪ টি। প্রিজাইডিং অফিসার সুমন শিকদার বলেন, 'সকাল ১২ টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ১৩৫ টি।'
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয় তলার ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪৫৯৬ জন। সকাল ১১ টা পর্যন্ত মাত্র ২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার আবদুস সালাম।
রবিবার সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের তিনজন প্রতিবেদক ২৫ কেন্দ্রে গেলেও নৌকা মার্কা ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর এজেন্ট চোখে পড়েনি। বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী আচরণবিধি না মেনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
শুরু থেকেই এই উপনির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কম দেখা গেছে। তবে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা আশা করেছিলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু দুপুরের পর অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটার নেই বললেই চলে। ভোট গ্রহণ শেষ হবে বিকেল ৪টায়। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ধারণা, বাকি সময় এভাবে চললে ভোটের হার ১৫ শতাংশের আশপাশে হবে।