কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবালের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত হাইকোর্টের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
ইকবালের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
রুলে তার বহিষ্কারাদেশ কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে ইকবাল তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তিনি তার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারবেন।
গত ৩১ জুলাই কুবি'র উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ২ আগস্ট ইকবালকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন।
ইকবাল দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিক সমিতির অর্থসম্পাদক।
ইকবালকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ৯ আগস্ট আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যসহ ৮ জনকে ইকবালের পক্ষে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছিল, তিন দিনের মধ্যে এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে উচ্চ আদালতে যাবেন ইকবাল।
নোটিশে আরও বলা হয়, যে অফিস আদেশের মাধ্যমে ইকবালকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সে আদেশে কোনো আইন বা বিধির উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া তার সংবাদে উল্লিখিত উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতের আপাত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর থেকে প্রতীয়মান হয়, উপাচার্য তার ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই ইকবালকে বহিষ্কার করেছেন।
এছাড়া গত ৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট সংবাদের ব্যাখ্যা দিয়ে ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে উপাচার্যের নিকট চিঠি দিয়েছেন ইকবাল। এখন পর্যন্ত সে চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ৩২ নং ধারা অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ড থাকার কথা থাকলেও সে সংক্রান্ত কোন বোর্ড এবং বিধি তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় কুবি প্রশাসনের এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বেআইনি ও এখতিয়ার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইকবাল তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন, যার সঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কার্যক্রমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, কোনো সংবাদের বিষয়ে যদি উপাচার্য সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে তার প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করার অধিকার রয়েছে।
তা না করে ইকবালকে বহিষ্কার করে উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইকবাল সংবাদকর্মী হিসেবে শুধু উপাচার্যের হুবুহু বক্তব্য তুলে ধরেছেন যার অডিও রেকর্ড তার কাছে রয়েছে।
সংবাদ প্রকাশের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ (২) (খ) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করেছেন মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ইকবালকে তার অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ইকবাল।