কাজ না থাকায় গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী ২৪% মানুষ: গবেষণা
গ্রামে কাজের সুযোগ না থাকায় প্রায় ২৪.৫০ শতাংশ পরিবার শহরমুখী হয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
'বাংলাদেশে নগর দারিদ্র্য' শীর্ষক এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। 'নগর দারিদ্র্য: বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভূমিতে অধিকার ও নাগরিক সেবায় অভিগম্যতা' শীর্ষক এক সেমিনারে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
সোমবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচআরডিসি)।
এএলআরডির সহায়তায় এইচআরডিসির করা গবেষণার নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক আবুল বারকাত। গবেষণাটি দেশের ৮টি সিটি করপোরেশন ও ৮টি পৌরসভার ৪৮০টি পরিবারের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে করা হয়। গত বছরের মে ও জুলাই মাসে এ জরিপ হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, নগরের বস্তিবাসীর ৯৪ শতাংশ ভূমিহীন। এই পরিবারগুলোর গড় বার্ষিক আয় বছরে দেড় লাখ টাকার বেশি। ৬৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা গ্রামে থাকা স্বজনদের জন্য টাকা পাঠান। বস্তিবাসীর ৮২ শতাংশ খাদ্য অনিরাপত্তায় থাকেন।
গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে আবুল বারকাত বলেন, সরকারি হিসাবে নগর দারিদ্র্যের সংখ্যা ১৮.৯ শতাংশ বলা হলেও এ গবেষণায় বলা হয়, এটা ৪০ শতাংশের কম হবে না।
গবেষণায় বলা হয়, বস্তির ঘরগুলোতে খুবই অমানবিকভাবে বাস করেন মানুষ। ছোট একটি ঘরে পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে থাকতে হয়। মাত্র ১৬ শতাংশের নিরাপদ স্যানিটেশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের জন্য তারা আয়ের তুলনায় যে মূল্য পরিশোধ করেন, তা শহরের ধনীদের তুলনায় বেশি। তারা এখানে বৈষম্যের শিকার।
বস্তির পরিবারের সদস্যের ৪১ শতাংশ কখনো স্কুলে যায়নি। অসুস্থতার জন্য ৬৪ শতাংশ স্থানীয় ফার্মেসিতে যায়।
বস্তিবাসীর ৯৫ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং করে থাকেন। মাত্র ৫ শতাংশের প্রচলিত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রামের সুবিধা পেয়েছেন ১২ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন গত বছর।
আবুল বারকাত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার বেশিরভাগ আয়োজন গ্রামকেন্দ্রিক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে গ্রামের মানুষ ভালো আছেন। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। নগরের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন এবং গ্রামীণ মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন না ঘটানো গেলে নগরমুখী স্রোত ঠেকানো যাবে না।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, যারা বস্তিবাসী আছেন, তারা ক্রমাগত একটি দারিদ্র্য প্রক্রিয়ার মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের জীবন মানের পেছনে প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা পাওয়ার অবস্থা, সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তাদের জন্য কী করে দিতে পারছে—এসবের ভূমিকা রয়েছে। তাদের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। শুধু টিকে থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। সব মানুষ যেন সমান মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেন, সেজন্য হয়েছিল।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, তাদের আরও বড় সম্পদ করে তুলতে চাইলে তারা যেসব বৈষম্যের শিকার হন, সেখান থেকে মুক্ত করতে হবে। উচ্চশিক্ষা 'মুড়িমুড়কির মতো' ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। সেখানে কী পড়াশোনা হচ্ছে, সেসব দেখার প্রয়োজন আছে বলে তিনি জানান।