ভারতে জি-২০ নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ভারত ছাড়াও আর্জেন্টিনা, কানাডা, কোরিয়া, সংযুক্ত আবর আমিরাত, সৌদি আরবের সরকার প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাইডলাইনে আলোচনা হতে পারে। এসব দেশের সাথে আলোচনায় বিনিয়োগ, রপ্তানি, জনশক্তি রপ্তানি, খাদ্য, জ্বালানি, সার, পর্যটন ও সংস্কৃতি, নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বের শীর্ষ ২০ দেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারতের দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ভারত সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে। বৈঠকে বহুল আলোচিত ইস্যু তিস্তা এবং অন্যান্য নদীর নায্য পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। ভারতীয় মুদ্রায় জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ, খাদ্য পণ্যের আমদানিতে কোটা নির্ধারণ, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নের প্রকল্পে শর্ত জটিলতা নিরসন প্রসঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি প্রতিষ্ঠান এসিডব্লিউএ পাওয়ার কোম্পানি ৩০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৪৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। গত ৬-৭ বছরে সৌদি আবরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু নানান জটিলতায় সৌদি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে জি-২০ সম্মেলনে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
এর বাইরে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি, জ্বালানি তেল কেনা, হজ ব্যবস্থাপনা সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং গ্রিন টেকনোলজিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে কানাডা। বাংলাদেশে কানাডিয়ান বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দেশটিতে কান্ট্রি ডেস্ক চালু করেছে। বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বিনিয়োগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে কানাডার বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
একইভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাত, কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন।
মধ্যপাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ কর্মী কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। জনশক্তি রপ্তানি ইস্যুতে সৌদি আরব ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কোরিয়ার সঙ্গে।
সৌদি আরবের মতো প্রাচ্যের আরেকটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে। অন্যদিকে, ২০০৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) মাধ্যমে ২৮,৬৯৭ বাংলাদেশি কর্মী নিয়েছে। এসব দেশে জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, ওষুধ, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগও রয়েছে।