সীতাকুণ্ডে আহত বানরটিকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না
সীতাকুণ্ডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হওয়া বানরটি শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) মারা গেছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বানরটিকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ভেটেরিনারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম জেলা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা দীপান্নিতা ভট্টাচার্য শুক্রবার দুপুরে বানরটির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা দেওয়ার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বানরটিকে ছাড়পত্র দেয় এবং আমরা তাকে আমাদের অফিস চত্বরে নিয়ে যাই। বানরটিকে সেখানে ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল।
'শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তার অবস্থা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বানরটির মৃত্যু হয়', তিনি যোগ করেন।
দীপান্নিতা ভট্টাচার্য বলেন, প্রথম দুই দিনে ওষুধ কাজ করায় আমরা আশান্বিত ছিলাম। বিভ্রান্ত হয়ে লোকালয়ে নেমে আসা এই নিরীহ প্রাণীটির জীবন বাঁচাতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু, ভেটেরিনারি ক্লিনিকে এই ধরনের প্রাণীর চিকিৎসা করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বানরটিকে যদি ক্লিনিকে একজন বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া যেত তাহলে তার জীবন বাঁচানো যেত।
প্রায় ২০ দিন আগে, বানরটি সীতাকুণ্ডের পাহাড় থেকে নেমে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশেপাশে থাকতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে রুটি, কলাসহ খাবার সরবরাহ করতেন।
স্থানীয় এবং রোগীর আত্মীয়দের থেকে খাবারের আশায় প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে আসত বানরটি।
গত ২৬ আগস্ট একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শক খেয়ে গুরুতর আহত হয় বানরটি।
স্থানীয়রা জানান, তারা বানরটিকে ধরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপরে কয়েকদিন বানরটির আর দেখা মেলেনি। কিন্তু শনিবার আবারও বানরটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির হয় এবং যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক ডা. নূরুদ্দিন রাশেদ বলেন, "শনিবার কাজ শেষে বেরোতে যাওয়ার সময় হাসপাতালের বারান্দায় বানরটিকে বসে থাকতে দেখি। এরপর আমি বানরটির ক্ষত ড্রেসিং করে দেই।"
৩ সেপ্টেম্বর আবারও বানরটি হাসপাতালের বারান্দায় হাজির হয় বলে জানান ডা. নূরুদ্দিন। তিনি বলেন, "বানরটিকে দেখে মনে হচ্ছিল এর খুব কষ্ট হচ্ছে এবং কয়েকটি ক্ষতস্থানে পচন ধরা শুরু করেছিল। বৈদ্যুতিক শক থেকে এমনটা হতে পারে। আজকে অফিসে আসার পর আমি বানরটি কোথায় আছে তা খোঁজ নেই। তারপর দেখা যায়, হাসপাতালের বাইরে একটি গাছের ডালে বানরটি বসে আছে।"
বানরটির শরীরে আঘাতের তীব্রতা বিবেচনা করে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাহমিনা আরজুকে এ বিষয়ে জানানো হয়। এরপর তিনি চিকিৎসকদের একটি দল নিয়ে সোমবার হাসপাতালে আসেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীদের এবং স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় তারা বানরটিকে ধরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু প্রাণীটির শরীরে ক্ষতের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।
পরবর্তীতে বানরটিকে চিকিৎসার জন্য সিভাসুতে পাঠানো নয়।
ডা. তাহমিনা আরজু বলেন, তার টিম বানরটিকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বানরটিকে ধরে রাখা কঠিন হওয়ায়, অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়া প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল না।
পরবর্তীতে, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহায়তায় সোমবার বিকালে বানরটিকে নিরাপদে সিভাসুতে স্থানান্তর করা হয়।