বাগেরহাটে নীরব তরমুজ বিপ্লব
দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ বা কুমড়া ঝুলে আছে। কাছে গেলে বোঝা যায়, গুনা ও নাইলনের সুতার জালে তৈরি বিশেষ মাচায় ঝুলছে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের বিভিন্ন রংয়ের তরমুজ। মাত্র চার মাসেই বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তররাজাপুর-আমতলা গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝির ক্ষেতে এমন বাম্পার ফলন হয়েছে। অসময়ের এই তরমুজের দামও ভাল হবে, এমন আশা বিমলের।
তিনি বলেন, 'নিজের জমি-জমা নেই। এক একর জমি বরগা নিয়ে মাছ ও ধান চাষ করতাম, এতেই মোটামুটি চলে আমাদের সংসার। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘেরের পাড়ে অফসিজন তরমুজের চাষ শুরু করি। তরমুজের বিচি, বাঁশ, কাঠ, নাইলনের সুতোর জাল, গুনা ও শ্রমিক মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। যে ফল হয়েছে, তাতে ১ লক্ষ টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারব। তরমুজ শেষ হলে, এই মাচায়ই কুমড়ো, লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা যাবে।'
অসময়ে তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝি বলেন, এই চাষটি স্বাভাবিক লাউ-কুমরো চাষের মতোই, মাটিতে জৈব ও রাসয়নিক সার দিয়ে বিচি বপন করতে হয়। পরে গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। যখন বৃষ্টি থাকে না, তখন পানি দিতে হয়। তেমন খরচ না হলেও, যত্ন করতে হয় অনেক।
বিমল চন্দ্র মাঝির ছেলে বিপুল চন্দ্র মাঝি বলেন, ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ কেনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। দুই-চার দিনের মধ্যেই তারা বিক্রি শুরু করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
শুধু বিমল চন্দ্র মাঝি নয়, ভালো দাম ও চাষাবাদ সহজ হওয়ায় জেলার অনেকেই অসময়ের তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৪১ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪০০ কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। আগামী বছরে চাষের জমি ও কৃষক আরও বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
অসীম কুমার তরুয়া নামের আরেক কৃষক বলেন, ৩৩ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। যদি সব মাছের ঘেরের পাড় ও উঁচু জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করা যায়, তাহলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভববান হতে পারে।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম মনি বলেন, 'আমাদের ইউনিয়নে অফসিজন তরমুজ চাষিদের সবসময় খোঁজখবর রাখছি। চাষিদের গাছে কখনও কোনো সমস্যা বা রোগব্যাধি দেখা দিলে সাথে সাথে আমরা মাঠে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।'
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অফসিজন তরমুজ চাষীদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এই চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে, যার কারণে চাষিরা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, 'সবসময় কৃষকদের উচ্চমূল্য সম্পন্ন ফসল চাষে উৎসাহ প্রদান করি। এজন্য কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শও দেওয়া হয়। এই কারণে জেলায় দিন দিন অফসিজন তরমুজ চাষি বৃদ্ধি পাচ্ছে।'