‘অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নাই, তিনজনের লাশ লইয়া বাড়ি যামু কেমনে’
'একজনের কাছ থেইকা আড়াই হাজার টাহা (টাকা) নিয়া ঢাকায় আইছি আমরা তিনজনে। এহন লাশ নিয়া বাড়ি যামু হেই টাহা হাতে নাই।'
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কে পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত মিজানের পিতা নাসির হাওলাদার। ছেলে, পুত্রবধু মুক্তা বেগম ও নাতনি লিমা আক্তারের মৃত্যুর খবর শুনে বৃহস্পতিবার রাতে টাকা ধার করে ঢাকায় আসেন তিনি।
মুঠোফোনে টিবিএসকে তিনি জানান, এখন অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষা করছেন। প্রথমে অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স পাননি। এখন ছেলের শ্বশুড় অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করেছে, কিন্তু কত টাকায় তা জানা নেই। লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছার পর কারো কাছ থেকে ঋণ করে ভাড়া দিবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।
নাসির হাওলাদার বলেন, কেমনে কি হইলো কইতে পারি না। আমিতো আইয়া দেহি আমার সোনার মানিকেরা লাশ হইয়া পইড়া আছে। দুপুরে পোস্ট মর্টেম শেষ করছে। এহন সব গুছাইয়া রওয়ানা দিতে রাইত ৯টা বাজব। রাইতের মধ্যে বাড়ি পৌঁছাতে পারলে কাইল সকালে বরিশালের বাড়িতে দাফন দিমু।
তিনি জানান, এখনো সাত মাসের শিশু হোসাইনকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারেননি। গ্রামে যাওয়ার আগে তাকে নিয়ে যাবেন। নাতির জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন নাসির ।
মিরপুরে পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারানো এই তিনজনের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরপাশা গ্রামে। তবে তারা সদর উপজেলার টিএন্ডটি রোড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
নাসির হাওলাদার জানান, তার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে নিহত মিজান মেঝ। চার বছর হলো মিজান ঢাকায় থাকেন। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতেন মিজান। কখনো লেবুর শরবত বা কখনো জুস বিক্রি করতেন।
এদিকে ঝালকাঠি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে নাসির হাওলাদারের বাড়িতে দেখা গেছে প্রতিবেশীদের ভিড়। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পেয়ে দলে দলে সমবেদনা জানাতে এসেছেন তারা। বাড়িতে নিহত মিজানের মা নিরু বেগম ও বোন আছেন। তিনজনের মৃত্যুর খবরের পর থেকেই গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা।
ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, আমি এই বিষয় এখনো কিছু জানি না। আমি ঢাকাতে আছি। তবে আপনি ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে কথা বললে তিনি সব জানাবেন। দরিদ্র এই পরিবারকে সহায়তার কোন সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে নেই আগে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম জাকিরের মুঠোফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।