চট্টগ্রামে তিন বছরে সড়কে ঝরেছে ২৬৩ প্রাণ
২০২০-২২ সাল, এই তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬৩ জন নিহত হয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীতে; যার মধ্যে ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার চালক।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এর যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত 'চট্টগ্রাম নগরী সড়ক নিরাপত্তা' প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রোববার নগর পুলিশের রেকর্ডের ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) প্রোগ্রামের আওতায় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তায় সিএমপি ও চসিক প্রতিবেদনটি তৈরি এবং প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নগরীতে এক লাখ মানুষের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৩৮ শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালে ২ দশমিক ১ থেকে ২০২২ সালে ২ দশমিক ৯ জনে পৌঁছেছে। নিরাপদে হাঁটার মতো সড়ক পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার কারণে শহরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে, যার প্রমাণ হলো মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশই পথচারী। এর বাইরে রোড ক্র্যাশে মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার চালকরা।
বন্দরনগরী হওয়ায় চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে প্রচুর সংখ্যক ভারী ট্রাক চলাচল করে এবং এসব যানবাহন অধিকাংশ পথচারী ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাকলিয়া থানা। সাধারণত ধর্মীয় উৎসব, ঈদ-উল-ফিতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ছুটির সময় বেশিরভাগ প্রাণহানি ঘটেছে বলে দেখা গেছে। ২০২০-২২ সময়কালে রোড ক্র্যাশে মৃত্যুর ৮১ শতাংশই ছিলেন পুরুষ এবং তাদের অধিকাংশই ছিলেন ২০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী। অন্যদিকে ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেশি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শহরের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক, যেখানে বিগত তিন বছরে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় পাঁচটি করে মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে টাইগারপাস মোড় এবং আউটার রিং রোডের খেজুরতলা, তিন বছরে সেখানকার ২৫০ মিটারের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছে।
নগরীর সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রতিবেদনটিতে শহরের ১০টি করে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং সড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে। সড়কগুলোকে নিরাপদ করতে বেপরোয়া গাড়ি চালনা বন্ধ করা এবং পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাথ প্রশস্ত করা, উঁচু ক্রসওয়াক নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত নিশ্চিত করা, গতিরোধক স্থাপন করতে হবে। এছাড়া মোটরচালিত গাড়ির পরিবর্তে বাইসাইকেলের ব্যবহার উৎসাহিত করার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় টিবিএসকে বলেন, 'বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যায়। কেউ রোগে, কেউ খুনের শিকার সহ আরও বিভিন্নভাবে। এর মধ্যে রোড ক্র্যাশে মানুষ মারা যাওয়ার পরিসংখ্যানে আমরা অষ্টম স্থানে। গত বছরে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫৩৯ জন আর খুনের শিকার হয়েছে ২৯৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু মানুষের বা পরিবারের ক্ষতি নয়। এটা সমাজের ও দেশের ক্ষতি।'