জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে পরীক্ষামূলকভাবে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার মন্ত্রী নিপসম অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১ শিক্ষার্থীকে দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে শুরু হয় ক্যান্সার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম।
১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক কোটির বেশি শিশুকে সারভারিক্স নামক হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের এই টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের কিশোরীদের ৯৫ ভাগকে এই টিকা দিতে চায় সরকার।
টিকা নেওয়া ১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুলের সাতজন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন, ডিপিএস স্কুলের দুজন এবং নারায়ণগঞ্জ সরকারি স্কুলের একজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদ মালেক বলেন, "দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের পেছনে চিকিৎসার পাশাপাশি ভ্যাকসিন অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। আজকে আমরা বাংলাদেশে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করতে যাচ্ছি। এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হল।"
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ইপিআইয়ের মাধ্যমে ১২-১৩টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তাদের কার্যক্রমের কারণেই প্রধানমন্ত্রী 'ভ্যাকসিন হিরো' হয়েছেন। জরায়ুমুখ ক্যানসারের এই টিকাদান শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন একটি মাইলফলকে পৌঁছাল। এইচপিভি ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকরী। এই ক্যান্সারে দেশে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ হাজার এবং বিশ্বজুড়ে তিন লাখের মত নারী মারা যায়। এই টিকা নিলে ৯৫ ভাগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি হয়। এতে করে শুধু জীবন রক্ষা হবে না, নারীদের সক্ষমতা বাড়বে। তারপরও স্ত্রিনিং চালিয়ে যেতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আজ (গতকাল) থেকে সীমিত আকারে এবং ১৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। এর বাইরেও যারা আছেন তাদের জন্যও সেন্টার থাকবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম।
টিকাদান ক্যাম্পেইনের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে- 'এক ডোজ এইচটিভি টিকা নিন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার রুখে দিন।'
অনুষ্ঠানে সারভারিক্স ভ্যাকসিন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) ব্যবস্থাপক এসএম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, "জরায়ুমুখের ক্যান্সারে গত তিন বছরে ১৫ হাজার মা-বোন মারা গেছে। এতদিন আমরা এই জায়গাটি এড্রেসই করতে পারিনি। তবে আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের, কারণ দীর্ঘদিন পরে হলেও আমরা এই জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পেরেছি।"
তিনি আরও বলেন, 'সারভারিক্স' ভ্যাকসিনটি ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৯০ শতাংশ কিশোরীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে আমাদের পরিকল্পনা হলো ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে এই ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। আমরা তিনটি ধাপে সারাদেশে এই কার্যক্রম পরিচালনা করব। কারণ, এই ভ্যাকসিনটির স্বল্পতা আছে। পর্যায়ক্রমে পাওয়া সাপেক্ষে আমরা টিকাদান কর্মসূচি ঘোষণা করব।"
এসএম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, 'প্রতিটি ভায়ালে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ থাকে, যা দু'জন কিশোরীকে দেওয়া হবে। এটি এক ডোজের টিকা, যা মাংসপেশিতে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ১৩১ দেশে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস টিকা দেওয়া হয়েছে, আর সারভারিক্স টিকাটি ২৪টি দেশে প্রয়োগ হয়েছে।