এমআরটি-৫ সাউদার্ন রুটে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৫ (এমআরটি-৫) সাউদার্ন রুট নির্মাণে সহায়তার জন্য ১ বিলিয়ন ঋণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ পরিবহন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বর্তমানে ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অংশগ্রহণের ফলে প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে, কারণ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) ইতিমধ্যে গাবতলী থেকে দশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি-৫ লাইন নির্মাণের জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে এটি হবে দ্বিতীয় মেট্রো রেল প্রকল্প। এমআরটি লাইন ৪-এর জন্যও ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।
ঋণ দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার আগ্রহের বিষয়টি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কেননা প্রকল্পটির জন্য এডিবির প্রযুক্তিগত সহায়তার অর্থায়ন আগামী বছরের ৩০ জুন শেষ হবে।
এমআরটি-৫ সাউদার্ন রুটের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল ওহাব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহ-অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কোরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা করছে ইআরডি।
তিনি বলেন, 'নির্বিঘ্ন রূপান্তর নিশ্চিত করতে আলোচনার সময়ও প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে। ক্রয় প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। কোরিয়া এক্সিমব্যাংকে ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হবে।'
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে এটি হবে দ্বিতীয় মেট্রো রেল প্রকল্প। এমআরটি লাইন ৪-এর জন্যও ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।
ঋণ দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার আগ্রহের বিষয়টি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কেননা প্রকল্পটির জন্য এডিবির প্রযুক্তিগত সহায়তার অর্থায়ন আগামী বছরের ৩০ জুন শেষ হবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, সহ-অর্থায়ন প্রক্রিয়া দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কোনো বিলম্বই প্রকল্প বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে না, কারণ পরামর্শদাতা নিয়োগ ও ঠিকাদার জোগাড়ের মতো পরবর্তী ক্রয় প্রক্রিয়াগুলো বিলম্ব না করে চালিয়ে যাওয়া হবে।
আব্দুল ওহাব বলেন, ঠিকাদার জোগাড়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আট থেকে নয় মাস সময় লাগতে পারে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু করার লক্ষ্য রয়েছে। সে হিসাবে নির্মাণ পর্যায়ের কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, জানান তিনি।
ইআরডির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে এমআরটি-৫ (সাউদার্ন) প্রকল্পে সহ-অর্থায়নের প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে।
ইআরডির আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'এডিবির অর্থায়নকৃত প্যাকেজের জন্য ওপেন বিডিং ঘোষণা করা হবে; এতে যেকোনো দেশের যোগ্য ঠিকাদাররা আবেদন করতে পারবে। কোরিয়ার অর্থায়নের প্যাকেজের জন্য শুধু কোরিয়ার মনোনীত প্রতিষ্ঠানই অংশ নিতে পারবে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে কম সুদে ঋণ পাচ্ছে।
ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) মাধ্যমে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে কোরিয়া। এ ঋণের সুদের হার হবে ০.০১ শতাংশ থেকে ০.০৫ শতাংশ, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ৪০ বছর। আর গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে ১৫ বছর। ইডিসিএফ ঋণের একমাত্র শর্ত হচ্ছে, এ ঋণের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে শুধু কোরিয়ান ঠিকাদাররাই অংশ নিতে পারবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের লক্ষ্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল প্রকল্প প্রস্তাবের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং ওই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বৈদেশিক ঋণ জোগাড় করা। ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে যদি অর্থায়ন—হয় এডিবি পুরো অর্থ দেবে, অথবা অন্য কেউ সহ-অর্থায়ন করবে—নিশ্চিত না হয়, তাহলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করা যাবে না; পাশাপাশি চলমান সহায়তা প্রকল্পগুলোও বিপদে পড়বে।
এছাড়া সরকারের কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ অনুযায়ী প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবর অনুমোদন দেওয়া না হলে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (যিনি নির্মাণপ্রক্রিয়া পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধান করেন) নিয়োগ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া বর্তমান প্রকল্পে নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনবলও ধরে রাখা যাবে না।