বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে বিলম্ব; কক্সবাজার শহরে পানির জন্য হাহাকার
ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবের তিন দিন পার হলেও কক্সবাজার শহরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুতের অভাবে চালানো যাচ্ছে না পাম্প। ফলে শহরজুড়ে পানির জন্য হাহাকার চলছে। একইসঙ্গে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক না হওয়ায়, চরম ভোগান্তিতে রয়েছে মানুষ।
দুর্গত এলাকাগুলোয় ভেঙে যাওয়া গাছ ও ডালপালা এখনও সরানো শেষ হয়নি। এতে বসতবাড়ি সংস্কারের চেষ্টারত লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ লাখ মানুষ। ভেঙে গেছে ৩৮ হাজারের বেশি বসতবাড়ি বা ঘর। গাছপালার ওপর ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব চলেছে সবচেয়ে বেশি। হাজার হাজার গাছ ভেঙে চলাচলে যেমন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে– তেমনি জটিল করে দিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রক্রিয়াও।
ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন ৩৩ কে.ভি লাইনের ১৭৪টি, ১১ কে.ভি লাইনের ১৮০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। ২৩টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৪৯৬টি স্পটে তার ছিড়ে গেছে। ১,৮৩৮টি মিটার নষ্ট হয়েছে। ৮০০টি স্পটে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
তিন দিন পরও কক্সবাজার শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হলেও, পৌর এলাকার বেশিরভাগ এখনও বিদ্যুৎবিহীন। বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া উপজেলায়। একইসঙ্গে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক কখনো পাওয়া যায়, কখনো যাচ্ছে না।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, 'বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এতেও নানান প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সরবরাহ শুরু হওয়া পরও কিছু কিছু এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া গাছ, তার ছিঁড়ে থাকার কারণে সরবরাহ বন্ধ করতে হচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎকর্মীরা পূর্ণদ্যমে কাজ করছেন। হয়তো শুক্রবার সকালের মধ্যে কক্সবাজার শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু, উপজেলা পর্যায়ে সেটা আরও জটিল। কাজ চলছে। আরও একদিন সময় লাগতে পারে।'
বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কক্সবাজার শহরজুড়ে এখন পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়, পেশকারপাড়া, নুরপাড়া, বদরমোকাম, টেকপাড়া, পাহাড়তলী, মোহাজের পাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য চলছে হাহাকার।
লালদিঘীর পাড়ের ফরিদুল আলম নামের এক বাড়ি মালিক জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিজস্ব পানির লাইনটি লবণাক্ত হওয়ায় পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে এই এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়েছে। কিন্তু, পৌরসভার পানি সরবরাহ শুরু না করায় পানি নিয়ে ভোগান্তিতে হচ্ছে। খাবার পানির জন্য বাজারের বোতলজাত পানি কেনা হচ্ছে। কিন্তু, অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পানি এভাবে কেনা সাধ্যের বাইরে। বুধবার রাত থেকেই এ অবস্থা চলছে।
টেকপাড়া এলাকার আবদুল গফুর জানান, বুধবার রাত থেকে পানি সংকট রয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। এই এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে একটু বিদ্যুৎ এলেও পরে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পাম্প চালু না থাকায় পানি ওঠানো যাচ্ছে না।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, 'বৃহস্পতিবার রাত থেকে পৌরসভার পানি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হতে পারে। বিদ্যুৎ সংযোগের জটিলতার কারণে এ বিলম্ব হচ্ছে।'
কক্সবাজার শহরের সমুদ্র নিকটবর্তী সমিতি পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে বসতির উপর উপড়ে পড়া শত শত ঝাউগাছ এখনও রয়েছে। যা সরানোর কাজ করছেন স্থানীয়রা।
ওই এলাকার আব্দুল হামিদ, বিলকিস বেগম ও হাসনা হেনা-সহ অনেকেই জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে বিধ্বস্ত তাদের বসতি। গত দু'দিনেও কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি বা কোন ধরণের সহায়তা দেয়নি।
এরমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, নুনিয়ারছড়া ও সদরের নিকটবর্তী খুরুশকুল ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, কক্সবাজারে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল– বাস্তবে তার চেয়ে আরো অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সরকার জনগণের পাশে রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দানের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চাহিদাপত্র চাওয়া হয়েছে।