টানেলে গাড়ির গতি পর্যবেক্ষণে বসবে স্পিড ক্যামেরা
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালুর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেসিং কার, বেপরোয়া গতি, টানেলের ভেতরে নেমে সেলফি তোলার ঘটনায় সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে কত গতিতে গাড়ি চলছে, তা নিরীক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায়, গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতায় আলোকে, স্পিড ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
টানেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "টানেলটি আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। যা ঘটছে, সবই আমলে নেওয়া হচ্ছে। টানেলের ভেতরে স্পিড গান বসানো হয় না। সেখানে স্পিড ক্যামেরা বসানো হয়। গাড়ির গতি পর্যবেক্ষণে আমরা স্পিড ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করছি।"
১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলটি গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়। চালুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে একটি প্রাডো গাড়ি উচ্চগতির কারণে টানেলের টোল প্লাজায় ধাক্কা দিলে রেলিং কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর মূল টানেলের বাইরের সড়কে রেসিং কারের স্টান্ট করার এবং টানেলের ভেতরে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়। একইদিন বিকালে টানেলের ভেতরে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেছে সাতকানিয়ার এক জনপ্রতিনিধি ও এক ছাত্রলীগ নেতাকে। অথচ টানেলে গাড়ি থামানো এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ। গত মঙ্গলবার বিকালে একটি প্রাইভেট কারকে একটি মিনি বাস পেছনে ধাক্কা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে টানেল কর্তৃপক্ষের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
টানেলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগ গতির বিষয়টি নির্দেশনা দেওয়া আছে। ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টরা এবং ব্যবহারকারীরা অভ্যস্ত হলে ভবিষ্যতে তা ৮০ কিলোমিটার বেগে উন্নতির কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি-এর সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জাহাঙ্গীর আলম টিবিএসকে বলেন, "রেলিং ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঘটনায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে বাস ধাক্কা দেওয়ার ঘটনার পর, গাড়ি দুটোই টানেলে গাড়ি থামায়নি। তারা চলে গেছে। সেলফি তোলার বিষয়টি হয়তো ৩০ সেকেন্ড বা এক মিনিটে হয়েছে। ক্যামেরা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তারা চলে গেছে। তবে মনিটরিং স্টেশন থেকে মাইকে এবং গাড়ির রেডিওতে নির্দেশনা সবসময় বাজানো হচ্ছে।"
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানেলটির নিরাপত্তায় নৌবাহিনীর ১০০ সদস্য, আনসারের ১২০ সদস্য এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ৮০ জন সদস্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন। তবে টোল প্রদানের বিষয় থাকায় পুলিশের গাড়ি অবাধে টানেলের ভেতরে ঢুকে না। টোল দেওয়ার মতো অর্থ বরাদ্দ নেই। আইনি জটিলতা রয়েছে। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি থানা স্থাপনের প্রস্তাব থাকলেও তা ঝুলে আছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে। দুটি পুলিশ ফাঁড়ির অবকাঠামো নির্মাণাধীন রয়েছে।
টানেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, "নৌ বাহিনীর নিরাপত্তা টহল গাড়িকে টোল দিতে হয় না। আমরা পুলিশকে বলেছি, যে গাড়িগুলো টানেলে টহলের কাজে নিয়োজিত থাকবে, সেগুলোর নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে। টোল ছাড়া টহলের ব্যবস্থা করা হবে।"
"আজ সকালে (বুধবার), নৌ নিরাপত্তা বাহিনী, সিসিসিসি ও পুলিশের সঙ্গে মিটিং করেছি আমরা। টানেল চালু হওয়ার পর কিছু উৎসুক মানুষ বিশৃঙ্খলা করছে। নতুন পরিস্থিতি খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগছে। আশা করছি, দ্রুত সবকিছুই ব্যবস্থাপনার মধ্যে চলে আসবে।"